রাবি প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে আগামী রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রমাণিকের আহ্বানে ডীনদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া সভায় গৃহীত অন্য তিনটি সিদ্ধান্ত হলো- ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. তারিকুল হাসান পদত্যাগ করায় প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল রাখতে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার শেখ সা’দ আহমেদকে রেজিস্ট্রারের চলতি দায়িত্ব দেওয়া, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথমবর্ষের স্থগিত ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে শিগগিরই ক্লাস শুরু করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদত্যাগ করায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে আবু হেনা মো. মোস্তফা কামালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কোষাধ্যক্ষ ড. অবায়দুর রহমান প্রমাণিক বলেন, আগামী রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-কার্যক্রম চালুসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিভাগগুলো চাইলে ক্লাস-পরীক্ষাও শুরু করতে পারবে।
এদিকে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. অবাইদুর রহমান প্রামানিক উপাচার্যের একাংশ দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক এবং প্রশাসনিক বিষয়গুলো দেখবেন। এছাড়াও সভায় জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে রেজিস্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে নতুন দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে উপাচার্য দপ্তর বরাবর পদত্যাগ পত্র জমা দেন সদ্য সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. তারিকুল হাসান। তিনি চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি মাসে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও হিসাব পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া ড. সা’দ আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি ক্রান্তিকাল সময় অতিবাহিত করছে। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে যথাযথভাবে এ দায়িত্ব পালন করব।
এদিকে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে স্নাতক প্রথমবর্ষে ক্লাস শুরুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কয়েকজন ডিন ও চিফ কো-অর্ডিনেটর।
এ বিষয়ে ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) চিফ কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. আবু সাদেক মো. কামরুজ্জামান বলেন, আগামী রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে খুলবে। ওই দিনই স্নাতক প্রথমবর্ষের স্থগিত হওয়া ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। কয়েকদিনের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করেই আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে নবীনদের ক্লাস শুরু করা হবে আশা করছি।
ব্যবসা অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক আ স ম কামরুজ্জামান জানান, আগামী রবিবার থেকে স্নাতক প্রথমবর্ষের স্থগিত ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। কয়েকদিনের মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করেই নবীনদের ক্লাস শুরু করা হবে। আশা করি, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটা সম্ভব হবে।
এর আগে, গত ২৮ জুন ঈদের ছুটির পর বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। তবে পেনশন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে ১ জুলাই থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর মধ্যেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। এতে ক্যাম্পাস খোলা থাকলেও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্নাতক প্রথমবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম ও ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়। ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা করেছিল কর্তৃপক্ষ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের ফলে পরদিন ৬ আগস্ট থেকেই শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
পরবর্তীতে ১৮ আগস্ট থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনার পর অনানুষ্ঠানিক ভাবে ক্লাসে ফিরতে দেখা গেছে ইসলামিক স্টাডিজ, সমাজকর্ম, রাষ্ট্র বিজ্ঞান, আইন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, বোটানি, ফিসারিজ, রসায়ন, ফোকলোরসহ কয়েকটি বিভাগের। এদিকে, সরকার পতনের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ ৯০ জন কর্মকর্তা পদত্যাগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।