মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহীতে সম্প্রতি নির্মিত একটি ফ্লাইওভার প্রকল্প খুব কম ব্যবহার হওয়ার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এতে সমালোচনা উঠেছে, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করেই সম্ভবত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮১০ মিটার ফ্লাইওভারসহ ৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মূল উদ্দেশ্য ছিলো শহরের মধ্যে যানবাহনের চাপ কমানো, যাতে শহরের মধ্যে রাজশাহী-ঢাকা হাইওয়ের বাসগুলো প্রবেশ না করে এই পথে চলাচল করে।
কিন্তু জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার পর গত ১০ মাসে দেখা গেছে, সড়কটির কাজলা রুয়েট চত্বর থেকে মেহেরচ-ী পর্যন্ত ফ্লাইওভারসহ ২.২৫ কিলোমিটার অংশটুকু ব্যবহার হয় না বললেই চলে। অধিকাংশ যানবাহনই ভদ্রা মোড় হয়ে বিদ্যমান পথে চলাচল করে। ভদ্রা মোড়ে সবসময়ই যানজট লেগে থাকে।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল (রুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোঃ কামরুজ্জামান প্রকল্পটির সমালোচনা করে বলেন, এটাকে খুবই হাস্যকর একটা প্রজেক্ট বলা যায়। এই সড়ক দিয়ে দিনে ১০০টি যানবাহনও চলাচল করে না।
তিনি আরও বলেন, আমার ধারণা, যারা ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যায়, তারা ফ্লাইভারটি দেখার জন্যই যায়। কেন যে আরডিএ কিংবা সরকার প্রকল্পটি হাতে নিল আর কেনই বা তা বাস্তবায়িত হলো, বলতে পারছি না। রুয়েটে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের মতো একটা বিভাগ থাকা সত্ত্বেও তাদের সাথে একটা আলোচনা করারও প্রয়োজন মনে করল না আরডিএ।
অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, একটা প্রকল্প নিলে তার কস্ট-ইফেক্টিভ অ্যনালাইসিস থাকতে হয়। আমার কাছে মনে হয়েছে, এখানে কোনো কস্ট- ইফেক্টিভ অ্যানালাইসিস হয়নি। এটা একটা অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্ট। অজায়গায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। পুরো প্রকল্পটির অর্থ নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ভদ্রা মোড়ে সবসময় যানজট লেগে থাকে। আর মানুষজন সবসময় ভদ্রা মোড় থেকে রেললাইনের ধার ধরে মেহেরচ-ী যাতায়াত করে।
আরডিএ সূত্রে জানা গেছে, নাটোর রোড (রুয়েট চত্বর) হতে বাইপাস রোড পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে’র অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত থাকলেও গত বছরের এপ্রিল মাসে এর কাজ সম্পন্ন হয়।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজলা রুয়েট চত্বর থেকে খড়খড়ি বাইপাস পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার বিটুমিনাস কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ, ৯ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন, ৮টি আরসিসি কালভার্ট, ৮১০ মিটার চার লেন ফ্লাইওভার, ৫ কিলোমিটার পানি সরবরাহ লাইন, ৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন, ৫ কিলোমিটার গ্যাস সরবরাহ লাইন ও টিঅ্যান্ডটি লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
আরডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রকল্প পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল তারিক বলেন, এই সড়ক নির্মাণের মূল লক্ষ্য ছিল শহরের মধ্যে যানবাহনের চাপ কমানো- যাতে ঢাকা-রাজশাহী হাইওয়ে থেকে শহরের মধ্যে বাস না গিয়ে কাজলা থেকে মেহেরচ-ী হয়ে খড়খড়ি বাইপাস দিয়ে আমচত্বর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় বাস চলাচল করতে পারে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল্লাহ আল তারিক বলেন, রাজশাহী-ঢাকা হাইওয়ের তালাইমারী থেকে কাটাখালী পর্যন্ত সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। সড়কটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে কাজলা-খড়খড়ি সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বাড়বে।
তিনি বলেন, সড়কটি নির্মাণের ফলে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন এবং নগরীর যোগাযোগব্যবস্থা সহজ ও উন্নত হয়েছে। এতে এলাকার মানুষজনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন অন্য কথা।
নগরীর মেহেরচী এলাকার বাসিন্দা রুবেল ইসলাম বলেন, মেহেরচী থেকে রেললাইনের ধার ধরে ভদ্রা পর্যন্ত সড়কটি অত্যন্ত সরু ও খানাখন্দে ভরা। বিদ্যমান এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির উন্নয়ন না করে নতুন রাস্তা নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর (সুজন) বিভাগীয় সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন মনে করেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের অর্থের অপচয় হয়েছে।
তিনি বলেন, কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করেই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কেন ও কী উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলো, তা যথাযথ তদন্ত করে বাস্তবায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, আরডিএ সরকারের একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন সেটি নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের পরামর্শ নিতে বাধ্য নয়। তবে ভবিষ্যতে ভদ্রা মোড় থেকে মেহেরচ-ী রাস্তাটি চওড়া করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক মোঃ গোলাম মাওলা শাওন ০১৭১১-০০৬২১৪,ব্যবস্থাপনা সম্পাদক 01762119992, প্রধান কার্যালয় ৩৪ নুরজাহান শরীফ প্লাজা ৮ম তলা, পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০। ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০ নিউজ ই-মেইল [email protected] সিভি পাঠান: [email protected]
দৈনিক বাংলার আলো নিউজ জিএমএস বাংলার আলো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।