বাংলাদেশ ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
ঢাকায় বাল্কহেডে নিহতদের স্বরনে রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন দক্ষিন শাখা শ্রমিক দলের দোয়া-মিলাদ ট্রাকে করে গাঁজা পরিবহন কালে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ ০৩ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। সাংবাদিক বাহার উদ্দিন সরকারের ৮ ম মৃত্যু বার্ষিকী পালন। কচুয়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত মুক্ত হত্যার খুনিদের ফাঁসির দাবিতে কচুয়ায় মানববন্ধন সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া চাইলেন রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মু্ক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান মল্লিক নাটোর জেলা কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সভা ও বেসিক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ায় বিজিবির অভিযানে ভারতীয় মদ ও ফেন্সিডিলসহ আটক-০৪ হোসেনপুরে গণ অধিকার পরিষদের আনন্দ মিছিল। পোড়াদহের চিথলিয়া রেল ব্রীজ থেকে নিচে পড়ে এক শিশু নিখোঁজ, দীর্ঘ (৫-৬)ঘন্টা পর উদ্ধার ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউনিয়ন পুজা উদযাপন পরিষদ গঠন শিক্ষার্থীদের বের করে জবির হল দখল করে কক্ষে তালা দিল ছাত্রদল ধান ক্ষেতের সাথে এ কেমন শত্রুতা লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে পরিত্যক্ত অবস্থায় ০৩টি শর্টগান, ৯৮ রাউন্ড কার্তুজ ও ০১টি পুলিশ বেল্ট উদ্ধার করেছে র‌্যাব। আল্লামা সাঈদীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে : নাজিরপুরে মাসুদ সাঈদী

ঝিনাইগাতী ৪ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস  

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৭:৫০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ১৬৯৫ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইগাতী ৪ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস  

মিজানুর রহমান ,শেরপুর  জেলা প্রতিনিধি : আজ ৪ ডিসেম্বর শেরপুরের ঝিনাইগাতী মুক্ত দিবস।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে, মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুরের ঝিনাইগাতী অঞ্চলকে শক্রমুক্ত করে। এদিবসটি পালন উপলক্ষে প্রতিবছর দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করা হয়।
পাক-হানাদার বাহিনী ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ কালো রাতে যখন ঢাকার বুকে হত্যাযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেই রাতেই ৩:৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরীত স্বাধীনতার ঘোষনার টেলিগ্রাম ম্যাসেজ ঝিনাইগাতী ভিএইচএফ ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌঁছে।
 ম্যাসেজ পেয়েই ওয়্যারলেস মাস্টার জামান সাহেব তার অফিসের পিয়ন পাঠিয়ে শেষ রাতের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক ফকির আঃ মান্নানের বাসায় সংবাদ দেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনার সংবাদ পেয়ে পরদিন ভোরেই অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ সকালে ছাত্র নেতা ফকির আঃ মান্নান, আব্দুল কাফি মিয়া, হারুনুর রশিদ (রশিদ মাষ্টার), ডাঃ সৈয়দ হোসেন,  সৈয়দ আলী মেম্বার, বাবু অনন্ত কুমার রায়, সেকান্দর আলী ফকির সহ অনেকেই ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌঁছান।
ইংরেজীতে লেখা টেলিগ্রাম ম্যাসেজটি পেয়েই নেতৃবৃন্দ তৎক্ষনাৎ তা শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরন করেন। ২৬ মার্চ সকাল থেকেই বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো ঢাকার সর্বশেষ সংবাদ কি তা জানার জন্যে শেরপুর শহরে মানুষ সমবেত হতে থাকে।
ঝিনাইগাতী ওয়্যারলেসে পাঠানো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনাটি শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ হাতে পেয়েই তা বাংলায় অনুবাদ করে শেরপুর নিউ মার্কেট মোড়ে জনতার স্বতঃস্ফুর্ত সমাবেশে পাঠ করে শুনানো হয়।
বঙ্গবন্ধুর পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষনার শ্রবণ করে সমবেত জনতা মুর্হুমুর্হু শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে শেরপুরের আকাশ বাতাস।
 ২৭ মার্চ সকালে শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ এডভোকেট আব্দুল হালিম এমপি, মুহসিন আলী মাস্টার ও ছাত্র নেতা আমজাদ আলী ঝিনাইগাতী এসে পৌছেন।
ঝিনাইগাতীর নেতৃবৃন্দ তাদের অভ্যর্থনা জানান। ছাত্রনেতা ফকির আব্দুল মান্নানকে সঙ্গে নিয়ে তারা নকশি ইপিআর ক্যাম্পে যান। নকশি ক্যাম্পের সুবেদার হাকিম নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে বসেই বিদ্রোহ ঘোষনা করেন।
দেশকে শত্রুমুক্ত করা সহ পাক হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শুরু হলো প্রতিরোধ সংগ্রাম।
যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে রাংটিয়া পাতার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। ট্রেনিং শেষে এসব স্বেচ্ছাসেবক সহ মুজিব বাহিনী ও ইপিআর সৈনিকদের নিয়ে সুবেদার হাকিম মধুপুরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে তা পিছু হটে পুরাতন ব্র্হ্মপুত্র নদের চরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
২৬ এপ্রিল সুবেদার হাকিম এর খোলা জীপ এসে দাঁড়ায় ঝিনাইগাতী  আমতলায়। সুবেদার হাকিম জনতাকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে অনুরোধ জানান।
২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঝিনাইগাতী শত্রুমুক্ত ছিল। ২৭ এপ্রিল পাক বাহিনী বহর নিয়ে গোলা বর্ষন করতে করতে পৌঁছায় ঝিনাইগাতী বাজারে। ঝিনাইগাতী ঢুকেই আওয়ামী লীগ অফিস আগুন ধরিয়ে পুড়ে দেয়। গাড়ী বহর নিয়ে রাংটিয়া পাহাড় পর্যন্ত গিয়ে আবার পিছনে ফিরে এসে ঐদিন বিকালেই কোয়ারীরোডে পাক বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে।
পরে ঝিনাইগাতীর এক মাইল দক্ষিণে আহম্মদনগর হাই স্কুলে তাদের সেক্টর হেড কোর্য়াটার স্থাপন করে। যা মুক্তিযোদ্ধাদের ১১নং সেক্টরের বিপরীতে পাক বাহিনীর ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরে একমাত্র সেক্টর হেড কোর্য়াটার।
 যার দায়িত্বে ছিলেন, মেজর রিয়াজ।  এছাড়া পাক বাহিনী শালচূড়া, নকশি, হলদীগ্রাম, তাওয়াকোচা, মোল্লাপাড়ায় ক্যাম্প স্থাপন করে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৬ বৈশাখ জগৎপুর গ্রামে হানা দিয়ে গ্রামটি পুড়িয়ে দেয় এবং পাক বাহিনী ৪১ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে।
৫ জুলাই কাটাখালি ব্রীজ ধ্বংস করে, মুক্তিযোদ্ধারা রাংগামাটি গ্রামে আশ্রয় নেয়। দালালদের খবরে পাক বাহিনী রাংগামাটি গ্রামে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে।
শুধু রাংগামাটি বিলের দিক খোলা ছিল। সম্মুখ যুদ্ধে কমান্ডার নাজমুল আহসান শহীদ হন। তাঁর লাশ আনতে গিয়ে আলী হুসেন ও মোফাজ্জল শহীদ হন। পরদিন রাংগামাটি গ্রামে হানা দিয়ে পাক বাহিনী ৯জন গ্রামবাসীকে এক লাইনে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
২৩ আগষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা তাওয়াকুচা ক্যাম্প দখল করে এবং মুক্ত তাওয়াকুচায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। তাওয়াকুচা যুদ্ধে ৪ জন পাক সৈন্য ও ৭ জন রাজাকার নিহত হলে পাক বাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে দিয়ে পিছু হটে আসে।
 ৩ আগষ্ট নকশি ক্যাম্প আক্রমন করে মুক্তিযোদ্ধারা। আগের দিন ২ আগষ্ট বিকেলে মেজর জিয়া নকশি ক্যাম্প আক্রমনের জন্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ারের অবস্থান গুলো দেখেন। এদিনের যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও নিখোজ হন। যুদ্ধে পাক বাহিনীর ৩৫ জন সৈন্য নিহত হয়।
২৭ নভেম্বর কমান্ডার জাফর ইকবালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী বাজারের রাজাকার ক্যাম্প দখল করে ৮টি রাইফেল সহ ৮ জন রাজাকারকে ধরে নিয়ে যায়। ২৮ নভেম্বর পাক বাহিনী ঝিনাইগাতী হানা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবিএম সিদ্দিকের ছোট ভাই ওমর (১১) ও মুক্তিযোদ্ধা মকবুলের পুত্র খালেক (১০), পাক বাহিনীর দালাল আব্দুর রহমান, গোজারত মেম্বার সহ ৮ জনকে আহম্মদনগর ক্যাম্পের বধ্যভূমিতে ধরে নিয়ে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
পরে তাদের এক গর্তে মাটি চাপা দিয়ে পুতে রাখে। ৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক দেড়টায় শালচূড়া ক্যাম্পের পাক বাহিনী কামালপুর দুর্গের পতনের আগাম সংবাদ পেয়ে পিছু হটে এবং আহম্মদনগর হেড কোর্য়ারটারের সৈনিকদের সাথে নিয়ে রাতেই মোল্লাপাড়া ক্যাম্প গুটিয়ে শেরপুরে আশ্রয় নেয়। এভাবে রাতের আঁধারে বিনা যুদ্ধে ঝিনাইগাতী শত্রু মুক্ত হয়।
 ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত ঝিনাইগাতীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ায়। তাই প্রতি বছর ৪ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে নানান কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি পালন করেন, ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসন ও মুক্ত দিবস উদযাপন কমিটি।
জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকায় বাল্কহেডে নিহতদের স্বরনে রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন দক্ষিন শাখা শ্রমিক দলের দোয়া-মিলাদ

ঝিনাইগাতী ৪ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস  

আপডেট সময় ০৭:৫০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩
মিজানুর রহমান ,শেরপুর  জেলা প্রতিনিধি : আজ ৪ ডিসেম্বর শেরপুরের ঝিনাইগাতী মুক্ত দিবস।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে, মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুরের ঝিনাইগাতী অঞ্চলকে শক্রমুক্ত করে। এদিবসটি পালন উপলক্ষে প্রতিবছর দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করা হয়।
পাক-হানাদার বাহিনী ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ কালো রাতে যখন ঢাকার বুকে হত্যাযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়ে, সেই রাতেই ৩:৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরীত স্বাধীনতার ঘোষনার টেলিগ্রাম ম্যাসেজ ঝিনাইগাতী ভিএইচএফ ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌঁছে।
 ম্যাসেজ পেয়েই ওয়্যারলেস মাস্টার জামান সাহেব তার অফিসের পিয়ন পাঠিয়ে শেষ রাতের দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক ফকির আঃ মান্নানের বাসায় সংবাদ দেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনার সংবাদ পেয়ে পরদিন ভোরেই অর্থাৎ ২৬ শে মার্চ সকালে ছাত্র নেতা ফকির আঃ মান্নান, আব্দুল কাফি মিয়া, হারুনুর রশিদ (রশিদ মাষ্টার), ডাঃ সৈয়দ হোসেন,  সৈয়দ আলী মেম্বার, বাবু অনন্ত কুমার রায়, সেকান্দর আলী ফকির সহ অনেকেই ওয়্যারলেস অফিসে এসে পৌঁছান।
ইংরেজীতে লেখা টেলিগ্রাম ম্যাসেজটি পেয়েই নেতৃবৃন্দ তৎক্ষনাৎ তা শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরন করেন। ২৬ মার্চ সকাল থেকেই বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো ঢাকার সর্বশেষ সংবাদ কি তা জানার জন্যে শেরপুর শহরে মানুষ সমবেত হতে থাকে।
ঝিনাইগাতী ওয়্যারলেসে পাঠানো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনাটি শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ হাতে পেয়েই তা বাংলায় অনুবাদ করে শেরপুর নিউ মার্কেট মোড়ে জনতার স্বতঃস্ফুর্ত সমাবেশে পাঠ করে শুনানো হয়।
বঙ্গবন্ধুর পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষনার শ্রবণ করে সমবেত জনতা মুর্হুমুর্হু শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে শেরপুরের আকাশ বাতাস।
 ২৭ মার্চ সকালে শেরপুর সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ এডভোকেট আব্দুল হালিম এমপি, মুহসিন আলী মাস্টার ও ছাত্র নেতা আমজাদ আলী ঝিনাইগাতী এসে পৌছেন।
ঝিনাইগাতীর নেতৃবৃন্দ তাদের অভ্যর্থনা জানান। ছাত্রনেতা ফকির আব্দুল মান্নানকে সঙ্গে নিয়ে তারা নকশি ইপিআর ক্যাম্পে যান। নকশি ক্যাম্পের সুবেদার হাকিম নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে বসেই বিদ্রোহ ঘোষনা করেন।
দেশকে শত্রুমুক্ত করা সহ পাক হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। শুরু হলো প্রতিরোধ সংগ্রাম।
যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে রাংটিয়া পাতার ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। ট্রেনিং শেষে এসব স্বেচ্ছাসেবক সহ মুজিব বাহিনী ও ইপিআর সৈনিকদের নিয়ে সুবেদার হাকিম মধুপুরে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পরে তা পিছু হটে পুরাতন ব্র্হ্মপুত্র নদের চরে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
২৬ এপ্রিল সুবেদার হাকিম এর খোলা জীপ এসে দাঁড়ায় ঝিনাইগাতী  আমতলায়। সুবেদার হাকিম জনতাকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে অনুরোধ জানান।
২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ঝিনাইগাতী শত্রুমুক্ত ছিল। ২৭ এপ্রিল পাক বাহিনী বহর নিয়ে গোলা বর্ষন করতে করতে পৌঁছায় ঝিনাইগাতী বাজারে। ঝিনাইগাতী ঢুকেই আওয়ামী লীগ অফিস আগুন ধরিয়ে পুড়ে দেয়। গাড়ী বহর নিয়ে রাংটিয়া পাহাড় পর্যন্ত গিয়ে আবার পিছনে ফিরে এসে ঐদিন বিকালেই কোয়ারীরোডে পাক বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে।
পরে ঝিনাইগাতীর এক মাইল দক্ষিণে আহম্মদনগর হাই স্কুলে তাদের সেক্টর হেড কোর্য়াটার স্থাপন করে। যা মুক্তিযোদ্ধাদের ১১নং সেক্টরের বিপরীতে পাক বাহিনীর ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তরে একমাত্র সেক্টর হেড কোর্য়াটার।
 যার দায়িত্বে ছিলেন, মেজর রিয়াজ।  এছাড়া পাক বাহিনী শালচূড়া, নকশি, হলদীগ্রাম, তাওয়াকোচা, মোল্লাপাড়ায় ক্যাম্প স্থাপন করে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৬ বৈশাখ জগৎপুর গ্রামে হানা দিয়ে গ্রামটি পুড়িয়ে দেয় এবং পাক বাহিনী ৪১ জন গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে।
৫ জুলাই কাটাখালি ব্রীজ ধ্বংস করে, মুক্তিযোদ্ধারা রাংগামাটি গ্রামে আশ্রয় নেয়। দালালদের খবরে পাক বাহিনী রাংগামাটি গ্রামে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে।
শুধু রাংগামাটি বিলের দিক খোলা ছিল। সম্মুখ যুদ্ধে কমান্ডার নাজমুল আহসান শহীদ হন। তাঁর লাশ আনতে গিয়ে আলী হুসেন ও মোফাজ্জল শহীদ হন। পরদিন রাংগামাটি গ্রামে হানা দিয়ে পাক বাহিনী ৯জন গ্রামবাসীকে এক লাইনে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
২৩ আগষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা তাওয়াকুচা ক্যাম্প দখল করে এবং মুক্ত তাওয়াকুচায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে। তাওয়াকুচা যুদ্ধে ৪ জন পাক সৈন্য ও ৭ জন রাজাকার নিহত হলে পাক বাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে দিয়ে পিছু হটে আসে।
 ৩ আগষ্ট নকশি ক্যাম্প আক্রমন করে মুক্তিযোদ্ধারা। আগের দিন ২ আগষ্ট বিকেলে মেজর জিয়া নকশি ক্যাম্প আক্রমনের জন্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতিয়ারের অবস্থান গুলো দেখেন। এদিনের যুদ্ধে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও নিখোজ হন। যুদ্ধে পাক বাহিনীর ৩৫ জন সৈন্য নিহত হয়।
২৭ নভেম্বর কমান্ডার জাফর ইকবালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঝিনাইগাতী বাজারের রাজাকার ক্যাম্প দখল করে ৮টি রাইফেল সহ ৮ জন রাজাকারকে ধরে নিয়ে যায়। ২৮ নভেম্বর পাক বাহিনী ঝিনাইগাতী হানা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবিএম সিদ্দিকের ছোট ভাই ওমর (১১) ও মুক্তিযোদ্ধা মকবুলের পুত্র খালেক (১০), পাক বাহিনীর দালাল আব্দুর রহমান, গোজারত মেম্বার সহ ৮ জনকে আহম্মদনগর ক্যাম্পের বধ্যভূমিতে ধরে নিয়ে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
পরে তাদের এক গর্তে মাটি চাপা দিয়ে পুতে রাখে। ৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক দেড়টায় শালচূড়া ক্যাম্পের পাক বাহিনী কামালপুর দুর্গের পতনের আগাম সংবাদ পেয়ে পিছু হটে এবং আহম্মদনগর হেড কোর্য়ারটারের সৈনিকদের সাথে নিয়ে রাতেই মোল্লাপাড়া ক্যাম্প গুটিয়ে শেরপুরে আশ্রয় নেয়। এভাবে রাতের আঁধারে বিনা যুদ্ধে ঝিনাইগাতী শত্রু মুক্ত হয়।
 ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত ঝিনাইগাতীতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ায়। তাই প্রতি বছর ৪ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে নানান কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি পালন করেন, ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসন ও মুক্ত দিবস উদযাপন কমিটি।