বাংলাদেশ ০১:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নোটিশ :

সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,, সাংবাদিক নিয়োগ চলছে,,০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০, ০১৭১২-৪৪৬৩০৬,০১৭১১-০০৬২১৪ সম্পাদক

     
ব্রেকিং নিউজ ::
বাঁচতে চায় ক্যান্সার আক্রান্ত জাকির সিকদার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে আগুনরঙা কৃষ্ণচূড়া জাতীয় টেলিভিশন বিতর্কে জয়ী রাবির বঙ্গবন্ধু হল নরসিংদীতে ছয়দিনের নবজাতকের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মা’র মৃত্যু ছেলের পর মারা গেলেন বাবা কুবিতে গুচ্ছ ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরিক্ষা সম্পন্ন, উপস্থিতি ৮৬ শতাংশ ঠাকুরগাঁওয়ের আরেক মাফিয়া -১ আলাদিনের চেরাগ পাওয়া বালিয়াডাঙ্গীর বেলাল দুদকের নজদারীতে জাল নোটের সরঞ্জাম ও টাকাসহ গ্রেফতার ৩ হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হলেন কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রার অবৈধ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতাসহ ০৭ জনকে গ্রেফতারসহ ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। ভ্রমন ও ভাড়ায় ব্যবহার হচ্ছে কুবির বাস রায়পুরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল শিক্ষকদের উপর হামলার প্রতিবাদে কুবির হাউজ টিউটরের পদত্যাগ মির্জাগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনে ৩ পদে ১৪ মনোনয়নপত্র জমা মাদকসহ ১০ জন মাদক ব্যবসায়ী কে গ্রেফতার।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় করাতিদের পেশা এখন ‘স’ মিলের দখলে

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৪:২৮:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ ২০২২
  • ২০১২ বার পড়া হয়েছে

আধুনিকতার ছোঁয়ায় করাতিদের পেশা এখন ‘স’ মিলের দখলে

 

 

 

 

নব্বই দশকের আগেও করাতিদের গাছ কাটার এমন দৃশ্য দেখতে পাড়ার ছেলেরা ভিড় করতো। কখনও কখনও গাছ কাটার জন্য থাকতো নানান সুরের গান। গানের তালে তালে চলতো গাছ কাটা। আর চারপাশে ভিড় জামাতো ছেলে-বুড়োরা। মুগ্ধ হয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করতেন সবাই। কালের বিবর্তন ও প্রযুক্তির বিকাশে যে সকল পেশা এখন বিলুপ্ত তার মধ্যে অন্যতম করাতি পেশা।

 

 

করাতকলে যান্ত্রিকতার ছোয়া লাগায় এ পেশার কদর দিন দিন কমে গেছে। এ কারনেই জীবন- জীবিকার তাগিদে সবাই পেশা বদল করেছেন। আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগেও বৈদ্যুতিক স’ মিলের তেমন দেখা মিলতো না। বড় বড় গাছ কিংবা আসবাব পত্রের কাঠ কাটার জন্য তখন নির্ভর করতে হতো করাতিদের উপর। বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত হতে চললেও একসময় এই সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায় প্রতিটা অঞ্চলেই দেখা মিলতো। এমনকি গ্রামে গ্রামে ফেরি করে গাছ কাটার কাজ করতেন এই করাতিরা। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব এগিয়ে চলেছে।

 

 

প্রগতি ও প্রযুক্তির যুগে কর্মব্যস্ত মানুষের ব্যস্ততা যেমন বেড়েছে, তেমনি যে কোনো কাজ কম খরচে দ্রুত সম্পন্ন করতে পারলেই মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচে বলে ধারণা জন্মেছে। তাই গ্রাম-গঞ্জেও এখন পুরোপুরি করাতকলের যান্ত্রিকতার ঢেউ লেগেছে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে করাতের ছন্দময় শব্দ। করাতি সম্প্রদায় আজ আর তেমন চোখে পড়ে না। আধুনিক স’ মিল আর কালের বিবর্তন এবং জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা অনেকেই পেশা বদল করেছেন। তাই আগের মতো তেমন আর চোখে পড়ে না করাতিদের গাছ কাটার দৃশ্য। বর্তমানে আধুনিকতার উৎকর্ষের দাপটের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের এই করাতি পেশা। প্রাচীন যুগে মানুষ বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ের গুহায় বসবাস করতো। মধ্যযুগে এসে একটু একটু করে মানুষ যখন সভ্যতা বুঝতে শিখে, তখন বনের কাঠ-বাঁশ, ডালপালা, লতাপাতা দিয়ে ঘর বানাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে উন্নয়ন ঘটতে থাকে সভ্যতার। সৌন্দর্য প্রিয় হয়ে উঠতে থাকে মানব জাতি। উন্নয়ন ঘটে রুচি বোধেরও। আর তখন থেকেই নিরাপদ বসবাসের জন্য শুরু হয় ঘরবাড়ি নির্মাণ।

 

 

মানুষ একসময় প্রয়োজনবোধ করে ভালো বাড়ি বাননোর। সুন্দর ও মজবুত বাড়ি বানাতে প্রয়োজন পড়ে গাছ কাটার। শুরুর দিকে লোহার করাতের আবিষ্কার বা ব্যবহার না জানলেও গাছ কাটার বিকল্প উপায় বের করে মানুষ। সঠিক দিনক্ষণ জানা নেই। তবে সভ্যতার বিবর্তনে এক সময় আবিষ্কার হয়ে যায় লোহার হাত করাতের। এর পর থেকেই প্রচলন হয় করাত দিয়ে কাঠ চেরাইয়ের। করাতি সম্প্রদায় গড়ে ওঠে সমাজে। কিন্তু সভ্যতার শুরুতে গড়ে ওঠা সেই করাতি সম্প্রদায় এখন প্রায় বিলুপ্ত। সচরাচর দেখা মেলে না এদের। অঞ্চল ভেদে করাতি সম্প্রদায়ের হাতেগোণা দু-একটি পরিবার ধরে রেখেছে তাদের এই পুরনো ঐতিহ্য। তবে, যান্ত্রিক করাত কলের বিস্তার ঘটায় এখন তাদের আর আগের মতোন কদর নেই। আগে তাদের মূল পেশাই ছিল এটি। গাছের শক্ত ডাল আর রসি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি কাঠামো। তাতে উপরে রাখা হয়েছে একটি বিশাল আকারের গাছ।

 

 

গাছের উপরে অবস্থান করছেন একজন আর নিচে দুইজন। হাতলযুক্ত করাত দিয়ে উপর-নিচে টেনে ছন্দে ছন্দে চিরানো হচ্ছে গাছ। নিচে ঝরে পড়ছে কাঠের কোমল গুঁড়া। কোন এক বড় গাছের ছায়ার নিচে গাছ চিরানোর এই কাজটি করে চলেছেন করাতিরা। তাদের শরীর বেয়ে ঝরছে ঘাম। করাতের অবস্থান এবং গতি ঠিক রাখতে কিছুক্ষণ পরপর দেয়া হচ্ছে সাময়িক বিরতি। হাতলযুক্ত করাত দিয়ে গাছ কাটার এ দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। রামগঞ্জ উপজেলার দেহলা গ্রামের বয়বৃদ্ধদের কাছ থেকে জানা যায়, তখনকার সময়ে করাতিরা মাটিতে গর্ত করে বা কয়েকটি গাছের সাথে কাঠের কাঠামো তৈরি করে করাত চালিয়ে গাছ কাটতেন। এই ধরনের করাত চালাতে উপরে এক জন আর নিচে অন্তত দুই বা ততোধিক মানুষের প্রয়োজন হতো।

 

 

হাতলযুক্ত করাত দিয়ে উপর-নিচ টেনে একটি গাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের কাঠ চিরানো হতো। তৈরিকৃত খুটি আর তক্তা দিয়ে ঘরের ছাউনি ও নানা রকম আসবাবপত্র তৈরি করা হতো। সে সময় কাঠ চিরতে আকার ও প্রকার ভেদে বর্গফুট হিসেবে মজুরি নিতেন করাতিরা। একটি মাঝারি সাইজের গাছ কাটা ও চিরানোতে এক দেড় হাজার টাকা খরচ পড়তো। আর তাতে সময় লাগতো প্রায় তিন দিনেরও বেশি। করাতিরা সকাল সকাল গুড়-পান্তা খেয়ে কাজে নেমে পড়তেন। করাতিদের অনেক পরিশ্রম হতো তাই তারা অত্যাধিক পরিমান খাবার খেতে পারত। লোক মুখে প্রচলিত আছে, পরিশ্রমের পর খাবারের সময় একজন করাতি এক সেরের চালের ভাত খেতে পারত। এভাবে পুরো মৌসুম কাটিয়ে দিতেন তারা। তারা আরো বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা এই কাজ করতেন। তাদের সাথে সাথে আমরাও কাজ শুরু করি।

 

 

তখন চন্ডিপুর, লামচর, আথাকরা, পানিওয়ালা, সমিতির বাজার, করপাড়া, কাঞ্চনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতাম। সেসময় সারা বছরই কাজ হতো। এখন কারেন্টের করাত কল গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে গেছে। মানুষ এখন সবকিছু সহজে করতে চায়। তাছাড়া বেশিরভাগ মানুষ পাকা বাড়ি তৈরী করছে। কাঠের ঘর খুবই কম হয়। তাই আমাদের আগের মতোন কদরও নেই। করাতির কাজ করে এখন সংসারও চলে না। এখন মজুরি বেশি কিন্তু কাজ কম। আগে একটি করাতের দাম ছিল ৭০০টাকা। আর এখন তা সাড়ে তিন-চার হাজার টাকা। অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বেশি। তাই এই পেশা পরিবর্তন করে আমাদের করাতি সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশিরভাগই অন্য পেশায় চলে গেছে।

 

 

 

 

জনপ্রিয় সংবাদ

বাঁচতে চায় ক্যান্সার আক্রান্ত জাকির সিকদার

আধুনিকতার ছোঁয়ায় করাতিদের পেশা এখন ‘স’ মিলের দখলে

আপডেট সময় ০৪:২৮:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ ২০২২

 

 

 

 

নব্বই দশকের আগেও করাতিদের গাছ কাটার এমন দৃশ্য দেখতে পাড়ার ছেলেরা ভিড় করতো। কখনও কখনও গাছ কাটার জন্য থাকতো নানান সুরের গান। গানের তালে তালে চলতো গাছ কাটা। আর চারপাশে ভিড় জামাতো ছেলে-বুড়োরা। মুগ্ধ হয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করতেন সবাই। কালের বিবর্তন ও প্রযুক্তির বিকাশে যে সকল পেশা এখন বিলুপ্ত তার মধ্যে অন্যতম করাতি পেশা।

 

 

করাতকলে যান্ত্রিকতার ছোয়া লাগায় এ পেশার কদর দিন দিন কমে গেছে। এ কারনেই জীবন- জীবিকার তাগিদে সবাই পেশা বদল করেছেন। আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগেও বৈদ্যুতিক স’ মিলের তেমন দেখা মিলতো না। বড় বড় গাছ কিংবা আসবাব পত্রের কাঠ কাটার জন্য তখন নির্ভর করতে হতো করাতিদের উপর। বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত হতে চললেও একসময় এই সম্প্রদায়ের লোকজন প্রায় প্রতিটা অঞ্চলেই দেখা মিলতো। এমনকি গ্রামে গ্রামে ফেরি করে গাছ কাটার কাজ করতেন এই করাতিরা। আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব এগিয়ে চলেছে।

 

 

প্রগতি ও প্রযুক্তির যুগে কর্মব্যস্ত মানুষের ব্যস্ততা যেমন বেড়েছে, তেমনি যে কোনো কাজ কম খরচে দ্রুত সম্পন্ন করতে পারলেই মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচে বলে ধারণা জন্মেছে। তাই গ্রাম-গঞ্জেও এখন পুরোপুরি করাতকলের যান্ত্রিকতার ঢেউ লেগেছে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে করাতের ছন্দময় শব্দ। করাতি সম্প্রদায় আজ আর তেমন চোখে পড়ে না। আধুনিক স’ মিল আর কালের বিবর্তন এবং জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা অনেকেই পেশা বদল করেছেন। তাই আগের মতো তেমন আর চোখে পড়ে না করাতিদের গাছ কাটার দৃশ্য। বর্তমানে আধুনিকতার উৎকর্ষের দাপটের কাছে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের এই করাতি পেশা। প্রাচীন যুগে মানুষ বনে-জঙ্গলে, পাহাড়ের গুহায় বসবাস করতো। মধ্যযুগে এসে একটু একটু করে মানুষ যখন সভ্যতা বুঝতে শিখে, তখন বনের কাঠ-বাঁশ, ডালপালা, লতাপাতা দিয়ে ঘর বানাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে উন্নয়ন ঘটতে থাকে সভ্যতার। সৌন্দর্য প্রিয় হয়ে উঠতে থাকে মানব জাতি। উন্নয়ন ঘটে রুচি বোধেরও। আর তখন থেকেই নিরাপদ বসবাসের জন্য শুরু হয় ঘরবাড়ি নির্মাণ।

 

 

মানুষ একসময় প্রয়োজনবোধ করে ভালো বাড়ি বাননোর। সুন্দর ও মজবুত বাড়ি বানাতে প্রয়োজন পড়ে গাছ কাটার। শুরুর দিকে লোহার করাতের আবিষ্কার বা ব্যবহার না জানলেও গাছ কাটার বিকল্প উপায় বের করে মানুষ। সঠিক দিনক্ষণ জানা নেই। তবে সভ্যতার বিবর্তনে এক সময় আবিষ্কার হয়ে যায় লোহার হাত করাতের। এর পর থেকেই প্রচলন হয় করাত দিয়ে কাঠ চেরাইয়ের। করাতি সম্প্রদায় গড়ে ওঠে সমাজে। কিন্তু সভ্যতার শুরুতে গড়ে ওঠা সেই করাতি সম্প্রদায় এখন প্রায় বিলুপ্ত। সচরাচর দেখা মেলে না এদের। অঞ্চল ভেদে করাতি সম্প্রদায়ের হাতেগোণা দু-একটি পরিবার ধরে রেখেছে তাদের এই পুরনো ঐতিহ্য। তবে, যান্ত্রিক করাত কলের বিস্তার ঘটায় এখন তাদের আর আগের মতোন কদর নেই। আগে তাদের মূল পেশাই ছিল এটি। গাছের শক্ত ডাল আর রসি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি কাঠামো। তাতে উপরে রাখা হয়েছে একটি বিশাল আকারের গাছ।

 

 

গাছের উপরে অবস্থান করছেন একজন আর নিচে দুইজন। হাতলযুক্ত করাত দিয়ে উপর-নিচে টেনে ছন্দে ছন্দে চিরানো হচ্ছে গাছ। নিচে ঝরে পড়ছে কাঠের কোমল গুঁড়া। কোন এক বড় গাছের ছায়ার নিচে গাছ চিরানোর এই কাজটি করে চলেছেন করাতিরা। তাদের শরীর বেয়ে ঝরছে ঘাম। করাতের অবস্থান এবং গতি ঠিক রাখতে কিছুক্ষণ পরপর দেয়া হচ্ছে সাময়িক বিরতি। হাতলযুক্ত করাত দিয়ে গাছ কাটার এ দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। রামগঞ্জ উপজেলার দেহলা গ্রামের বয়বৃদ্ধদের কাছ থেকে জানা যায়, তখনকার সময়ে করাতিরা মাটিতে গর্ত করে বা কয়েকটি গাছের সাথে কাঠের কাঠামো তৈরি করে করাত চালিয়ে গাছ কাটতেন। এই ধরনের করাত চালাতে উপরে এক জন আর নিচে অন্তত দুই বা ততোধিক মানুষের প্রয়োজন হতো।

 

 

হাতলযুক্ত করাত দিয়ে উপর-নিচ টেনে একটি গাছ থেকে বিভিন্ন সাইজের কাঠ চিরানো হতো। তৈরিকৃত খুটি আর তক্তা দিয়ে ঘরের ছাউনি ও নানা রকম আসবাবপত্র তৈরি করা হতো। সে সময় কাঠ চিরতে আকার ও প্রকার ভেদে বর্গফুট হিসেবে মজুরি নিতেন করাতিরা। একটি মাঝারি সাইজের গাছ কাটা ও চিরানোতে এক দেড় হাজার টাকা খরচ পড়তো। আর তাতে সময় লাগতো প্রায় তিন দিনেরও বেশি। করাতিরা সকাল সকাল গুড়-পান্তা খেয়ে কাজে নেমে পড়তেন। করাতিদের অনেক পরিশ্রম হতো তাই তারা অত্যাধিক পরিমান খাবার খেতে পারত। লোক মুখে প্রচলিত আছে, পরিশ্রমের পর খাবারের সময় একজন করাতি এক সেরের চালের ভাত খেতে পারত। এভাবে পুরো মৌসুম কাটিয়ে দিতেন তারা। তারা আরো বলেন, আমাদের বাপ-দাদারা এই কাজ করতেন। তাদের সাথে সাথে আমরাও কাজ শুরু করি।

 

 

তখন চন্ডিপুর, লামচর, আথাকরা, পানিওয়ালা, সমিতির বাজার, করপাড়া, কাঞ্চনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করতাম। সেসময় সারা বছরই কাজ হতো। এখন কারেন্টের করাত কল গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে গেছে। মানুষ এখন সবকিছু সহজে করতে চায়। তাছাড়া বেশিরভাগ মানুষ পাকা বাড়ি তৈরী করছে। কাঠের ঘর খুবই কম হয়। তাই আমাদের আগের মতোন কদরও নেই। করাতির কাজ করে এখন সংসারও চলে না। এখন মজুরি বেশি কিন্তু কাজ কম। আগে একটি করাতের দাম ছিল ৭০০টাকা। আর এখন তা সাড়ে তিন-চার হাজার টাকা। অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বেশি। তাই এই পেশা পরিবর্তন করে আমাদের করাতি সম্প্রদায়ের লোকেরা বেশিরভাগই অন্য পেশায় চলে গেছে।