নাহিদ সরদার বানারীপাড়া প্রতিনিধিঃ
বরিশালের বানারীপাড়ায় সূর্যমনি মেলার নামটি শুনলেই মনে এক ধরণের আনন্দের উচ্ছ্বাস জেগে ওঠে। আর সূর্যমণি মেলা এখান কার মানুষদের মনে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস আরও এক ধাপ যেন বাড়িয়ে দেয়। বরিশাল বিভাগের বা আশেপাশের আরও অনেক জেলার মধ্যে এমন কোন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা সূর্যমণি মেলার নাম শুনেননি। ২২৭ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী লোকজ আয়োজন নিয়ে সগর্বে টিকে আছে প্রাচ্যের ভ্যানিস খ্যাত বরিশাল জেলার সূর্যমণি মেলা।
লোকজ মেলাটি বরিশাল জেলা শহর হতে প্রায় ২৯ কিলোমিটার পূর্বদিকে সন্ধ্যা নদীর তীরে বানারীপাড়া উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের বেতাল গ্রামের সূর্যাকৃতির মূর্তি পাওয়ার স্থানে প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমার শুক্লা তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। মেলা উপলক্ষে এখানকার প্রতিটি বাড়িতে আত্বিয়-স্বজনরা এসে জড়ো হয়। চারিদিকে উৎসব মূখর অবস্থা বিরাজ করে। প্রায় মাস ব্যপী সেই উৎসব উদ্দীপনা চলতে থাকে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল আর বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মেলামুখি মানুষের ঢল বাড়তেই থাকে। শুধু বরিশাল জেলা নয় আশেপাশের জেলা থেকেও মেলায় আসেন শত শত মানুষ। স্থানীয়রা বছর ধরে পয়সা জমান মেলা থেকে বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা কাটার জন্য।
কথিত আছে আজ থেকে প্রায় ২২৭ বছর আগে বেতাল গ্রামে যেখানে মেলা অনুষ্ঠিত হয় সেখানে কৃষকরা চাষের জন্য জমিতে লাঙ্গল দেয়ার সময় ফলা আটকে যায়। তৎকালীন সময় ওই জমির মালিক গঙ্গু সরকারের মায়ের কাছে চাষীরা ছুটে গিয়ে বিষয়টি জানান। পরে লাঙ্গলের ফলা আটকে যাবার স্থানে মাটি খুঁড়ে একটি কষ্টি পাথরের সূর্যাকৃতি মূর্তির পান তারা। দিনটি ছিলো সপ্তমী মাঘী পূর্ণিমার শুক্লা তিথি। সেই সময় থেকেই এই তিথিতে প্রতি বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
পরে মেলার নাম করণ করা হয় সূর্যমণি মেলা। এরপরে গঙ্গু সরকারের কয়েক পুরুষ এই মেলার আয়োজন করেণ। পরে তারা স্বপরিবারে ভারতে চলেযান। তখন স্থানীয় ভট্টচার্য্য পরিবারকে সূর্যপূজার মাধ্যমে প্রতি বছর সূর্যমণি মেলার আযোজন করতে অনুরোধ জানিয়ে যান সরকার পরিবার। সাথে সাথে বেতাল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মোল্লা পরিবারকে ওখানকার সংখ্যালঘু পরিবার এবং মেলার দেখভাল করার অনুরোধ জানিয়ে সরকার পরিবারের স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পত্তি তাদের কাছে বিক্রয় করেন। তবে তাদের বড় অনুরোধ ছিলো ওই জমিতে যেন স্থানীয় সংখ্যালঘু পরিবার পুজা এবং মেলার আয়োজন করতে পারেন।