নুর আলম। উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি।
কুড়িগ্রামের উলিপুরে বোরো ধানের ন্যায্য মুল্য না পাওয়ায় দিশেহারা কৃষকেরা। চাষিরা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, আকাশে গাঢ় ঘনকালো মেঘের ঘনঘাটার মাঝে ধানকাটা মাড়াই নিয়ে শ্রমিক সংকটে চরম বিপাকে পড়েছে। মাঠভরা পাকাধান পড়ে রয়েছে। শ্রমিক সংকটের কারণে এ ধান ঘরে তুলতে পারছে না হাজার হাজার কৃষক। এতে দুর্যোগ আতঙ্কে চরম উৎকন্ঠতার মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদেরকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় ধানের দাম কম হওয়ায় ধান চাষিরা অনেক বিপাকে পরেছেন। উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের উমানন্দ ক্বারিপাড়া গ্রামের আতাউর রহমান, গুনাইগাছ ইউনিয়নের বামনাছড়া গ্রামের সুশান্ত কুমার, থেতরাই ইউনিয়নের হারুনেফড়া গ্রামের আশরাফ আলী, বজরা ইউনিয়নের মিয়াজি পাড়া গ্রামের কামরুজ্জামান সরকার বলেন, আমরা বিঘা বিঘা (৬০ শতাংশ) জমিতে উন্নত জাতের মোটা ধান লাগিয়েছি। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। আমরা বিঘাতে (৬০ শতক) এ ৪৫ থেকে ৫০ মন ধান পেয়েছি। আমারা বিঘাতে খরচ করেছি প্রায় ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বিঘাতে মোটা ধানের মণ প্রতি ৭০০ টাকা দরে ধান বিক্রি করে টাকা পেয়েছি প্রায় ২৯ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। সীমিত লাভের টাকায় আমরা কিভাবে চলব। আমরা অনেক চিন্তিত আছি। তারা বলেন আমাদেরকে ধানের ন্যায্য মুল্য দিলে আমরা লাভবান হতাম।
বোরো ধান কাটা শ্রমিক মঞ্জু, হাবলু, হামিদ, মফিজল সহ আরও অনেকে বলেন গত বছর অল্পমুল্যে আমরা ধান উঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এবার বাজারে দ্রব্য মুল্যের যে ঊর্ধগতি বিঘা (৬০শতক) প্রতি আমরা ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা নিচ্ছি তা দিয়েও আমাদের সংসার পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছেনা। তারা আরো বলেন বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাকা ধান তারাতারি করে ঘরে তোলার চাপ পরেছে।
জানা যায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলার সকল ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে ব্যাপক হারে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবার প্রায় ২৩ হাজার ৩শ ৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আগাম জাতের জিরাসাইল ও ব্রি-৮১ ধানের চাষ অধিক পরিমাণ জমিতে করা হয়েছে। এসব ধান এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই পাকতে শুরু করেছে। বর্তমানে এ ইউনিয়ন গুলোর প্রতিটি মাঠে পাকা ধানের সোনালি রঙে রঙিন হয়ে রয়েছে। এদিকে অন্যান্য বছর অল্প মূল্যে শ্রমিক পাওয়া যেত ধানকাটা শ্রমিক পেতে সমস্যা হতনা। এতে যথাসময়েই কৃষকরা তাদের পাকা ধান গোলায় তুলতে পারতো। এবারে বাজারে দ্রব্যের মুল্য ঊর্ধমুখী হওয়ায় শ্রমিকদের মুল্য অনেক দিতে হচ্ছে। বিপাকে পড়ছেন কৃষকেরা।
উলিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম জানান, কৃষকদের আবাদকৃত ধানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, জিরাশাইল, ব্রি-২৮, ২৯, ৫৮, ৭৪, ৮১, ৮৮, ৮৯ সহ বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধান। উপজেলায় এবার ২২ হাজার ১শ’ ৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৩০০শ ৭৫ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২শ’ হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, এবারে উপজেলার প্রতিটি মাঠে বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে তারা লাভবান হবে।