প্রেস বিজ্ঞপ্তি
র্যাব-৩ এর অভিযানে ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকা থেকে সুচিকিৎসার নামে প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ লোকদের জিম্মি করে অবৈধভাবে মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রয়কারী প্রতারক চক্রের ০১ জন সদস্য আটক।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এ পর্যন্ত জঙ্গি, সাইবার ক্রাইম, সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, মানবপাচারকারী, চাঁদাবাজ, নৈরাজ্যকারী, বিভিন্ন মামলার আসামী, অপহরণকারী, জালনোট ব্যবসায়ী, প্রতারক চক্র এবং চাঞ্চল্যকর অভিযান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ জানতে পারে যে, কতিপয় মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রয়কারী চক্রের সদস্য দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে নিরীহ লোকদের সুচিকিৎসার নামে প্রলোভন দেখিয়ে জিম্মি করে দেশে বিদেশে অবৈধভাবে মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রয় করে আসছে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য র্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল ০৩/০৪/২০২২ তারিখ ১৭১৫ ঘটিকার সময় ঢাকা জেলার অশুলিয়া থানাধীন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মানব দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রয়কারী প্রতারক চক্রের সদস্য ১। মোছাঃ বিউটি বেগম, সাং-ভাটোতারা কালীবাড়ী, থানা-নাটোর সদর, জেলা-নাটোরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীর নিকট হতে ০১ টি মেডিকেল ডকুমেন্ট ফাইল এবং ০১ টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামী জানায় যে, বাদী গত ১০/০৯/২০২১ তারিখ অনুমানিক ২২০০ ঘটিকার সময় শারীরিকভাবে অসুস্থতাবোধ করলে তার স্ত্রী আসামীর সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেন। তখন আসামী তাদেরকে তার বাসায় আসতে বলে। বাদী এবং তার স্ত্রী গত ১১/০৯/২০২১ তারিখ আনুমানিক ২১৩০ ঘটিকার সময় আসামীর ভাড়াকৃত বাসায় যায়। আসামী তাদের সাথে শারীরিক বিষয়ে আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে বাদীকে ভারতে নিয়ে সু চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে মর্মে প্রলোভন দেখায়। আসামী ভারতে কয়েকবার আসা যাওয়া করেছে এবং বিভিন্ন লোককে ভারতে নিয়ে কম খরচে চিকিৎসা করিয়ে সাহায্য করে আসছে মর্মে বাদীকে তার পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্র দেখায়। বাদী আসামীর প্রলোভন বুঝতে না পেরে তাকে বিশ্বাস করে এবং আসামীর পরামর্শমত বাদী ও তার স্ত্রীর নামে পাসপোর্ট ও ভিসা করে। পরবর্তীতে গত ০৪/১১/২০২১ তারিখ আনুমানিক ০৫৩০ ঘটিকার সময় বাদী ও তার স্ত্রীকেসহ আসামী তার ভাড়াকৃত বাসা হতে যশোরে নিয়ে যায় এবং যশোর বর্ডার দিয়ে ভারত পাঠিয়ে দেয়। বাদী ও তার স্ত্রী ভারত পৌছালে সেখানে অবস্থানরত পলাতক আসামী ১। মোঃ শহীদ (৪৫), সাং-ভাটোতারা কালীবাড়ি, থানা-নাটোর সদর, জেলা-নাটোর এবং ২। শেখ ফরিদ (৪২), সাং-পাইকপাড়া, থানা-সোনাগাজী, জেলা-ফেনীদ্বয় তাদেরকে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে রাখে।
আসামীগণ অজ্ঞাত স্থান থেকে ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে বাদীকে নিয়ে ডাক্তার দেখায়। পলাতক আসামীরা চিকিৎসার নামে কৌশলে বাদীর নিকট থেকে সেচ্ছায় কিডনি দান করার সম্মতি কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। কয়েক দিন পর আসামীগণ ভারতের কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর কথা বলে বাদীকে নিয়ে ভর্তি করায়। সেখানে বিভিন্ন তারিখে বাদীর শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এবং তার অপারেশন করতে হবে বলে তাকে জানায়। এর কয়েকদিন পর উক্ত হাসপাতালের একটি রুমে বাদীকে একা নিয়ে অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়। অপারেশন শেষে বাদীর জ্ঞান ফেরার পর তার পেটের বাম পার্শ্বে কাঁটা দেখে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, সে তার কিডনী সেচ্ছায় দান করেছে। বাদী তখন আসামীদের নিকট থেকে তার কিডনী বিক্রি করার কথা জানতে চাইলে তারা তকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায় এবং গত ২১/০২/২০২২ তারিখে তাকে ও স্ত্রীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
ধৃত ও পলাতক আসামীদ্বয় পরস্পর যোগসাজসে বাদীকে সুচিকিৎসা করানোর কথা বলে অনুমতি ছাড়া তার বাম পার্শ্বের কিডনী বিক্রি করে দেয়। বাদী পরবর্তীতে বাংলাদেশে এসে সুচিকিৎসা না পেয়ে অসহায়ত্ব জীবনযাপন করছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বীণা রানী দাস, পিপিএম, পিপিএম (সেবা) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (অপ্স ও ইন্ট শাখা) পক্ষে পরিচালক