স্টাফ রির্পোটার:
ময়মনসিংহে স্বাস্থ্য সেবাকে হাতিয়ার বানিয়ে নীরবে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির দূর্গে পরিনত করে অনিয়মকেও নিয়মে পরিনত করেছেন, ময়মনসিংহের জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খান (কোড নং- ১১৩০৩৪)। অলৌকিক ক্ষমতায় দীর্ঘদিন যাবত ময়মনসিংহেই কর্মরত আছেন তিনি।
জানা যায়, সিভিল সার্জন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জুরুরী বিভাগে মেডিকেল অফিসার পদে কর্মরত অবস্থায় জখমী সনদপত্র প্রদানের বিষয়ে জখমী রোগীদের ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করতে অনৈতিক সুবিধা গ্রহন এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় হাসপাতাল প্রশাসনের সুনাম ও ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখতে ২০১৬ সালের ৭ আগস্ট জরুরী ভিত্তিতে অন্যত্র বদলী এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাছির উদ্দীন আহমদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।
যার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ সমীর কান্তি সরকার ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর ১৪১২৭ নং স্মারকে তাকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে বদলী করলে বের হয়ে আসে থলের বেড়াল। ওই সিভিল সার্জন ছাইফুল ছিলেন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর নেতা ও তার ভোটার তালিকা নম্বর ২৭৭।
সেই সুবাদে স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এমএ আজিজের সুপারিশক্রমে ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর মমেকহা/প্রশাঃ/২০১৬/৩৫৭০২ নং স্মারকে বদলীর আদেশ বাতিলের জন্য আবেদনপত্র প্রেরণ করেন। এমনকি ২০১৬ সালের ১৮ আগস্ট এই সিভিল সার্জনের বিভিন্ন অপরাধ স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবরে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, ডাঃ এমএ আজিজের সহোদর ভাই টুপি ফারুকের সাথে যোগসাজশে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জালিয়াতি সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
৫ আগষ্টে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ পতনের পর তিনি ভোল্ট পাল্টে ড্যাব নেতা হিসাবে আত্ম প্রকাশ করেন। সিভিল সার্জন হিসাবে ময়মনসিংহে পদায়ন নেন। এখন ময়মনসিংহের প্রতিটি উপজেলায় আতংকের আরেক নাম ডাঃ ছাইফুল ইসলাম খান। ড্যাবের নবনিবার্চিত কমিটির নামে প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা চাঁদাবাজি করে থাকেন।
সেই সাথে একই কর্মস্থলে ১০ বছরের অধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকা করেন। সকলকেই বিভিন্ন সময়ে সিভিল সার্জন অফিসে স্যাকমো, এমটিইপিআই, সিএইচসিপি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করেন বদলীর বিষয়ে। ডাক্তারসহ কাউকেই ছাড় দিচ্ছেন না।
টাকা দিলে বদলী বাতিল করেন অন্যথায় বদলী করেন। সিভিল সার্জনের মদদপুষ্ট ও সিন্ডিকেট বাহিনীর প্রধান অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার জাকির হোসেনের মাধ্যমে ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক লাইনেন্স করার নিমিত্ত্বে ঘুষ বাণিজ্য করার অভিযোগ পুরানো। যার কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ এ বি এম আবু হানিফ এই জাকির হোসেনকে নেত্রকোনা খালিয়াজুড়িতে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে যোগদানের করতে বদলীর আদেশ প্রদান করেন।
এবং বদলীর আদেশে উল্লেখ করেন, “বদলীর ছাড়পত্রের কাগজ গ্রহগ না করলে ৪র্থ কর্ম দিবস হতে সরাসরি অব্যহতি পেয়েছেন বলে গন্য হবে”। বদলী হওয়ার পর জাকির হোসেন ২৬ আগস্ট, ২০২৫ থেকে হাজিরা খাতায় কৌশল অবলম্বন করে ছুটি নিয়েও সিভিল সার্জন এর নির্দেশে তিনি প্রতিদিনই অফিস করত। সিভিল সার্জন জাকিরকে ছাড়পত্র না দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। যার কারণে এই সিভিল সার্জন জাকিরের বদলী বাতিলের জন্য ২৭ আগস্ট মহাপরিচালক বরাবরে ২০২৫-২০২৬/৩৫২৭ নং স্মারক মূলে আবেদন পেরণ করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সিভিল সার্জন জাকিরকে ৩১ আগস্ট, ২০২৫ ছাড়পত্র দিতে বাধ্য হয়।
এবিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম খানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে উনার বিরূদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে উনি প্রতিবেদককে হুমকী দিয়ে তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এসংক্রান্তে ময়মনসিংহ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ প্রদীপ কুমার সাহা জানান, তদন্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।