সরকার বঞ্চিত বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে নিমসার বাজারে সওজ’র কোটি কোটি টাকার জায়গা বেদখল!
আপডেট সময় :
২০২৫-০৯-১৪ ২১:৩৯:২৭
সরকার বঞ্চিত বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে নিমসার বাজারে সওজ’র কোটি কোটি টাকার জায়গা বেদখল!
বুড়িচং কুমিল্লা প্রতিনিধি।
দেশের অন্যতম বৃহৎ সব্জির পাইকার বাজার নিমসার বাজার এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোটি কোটি টাকার মুল্যবান জায়গা দখল করে একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিবছর। কখনো মাইকিং করে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও বেলা শেষে আবারো দখল করে নিচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার এলাকা। জাতীয় প্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে থাকা অখ্যত এই জায়গাটিতে এক সময় এলাকার দানবীর জুনাব আলী নিজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করলে স্থানটির গুরুত্ব বেড়ে যায়। পরবর্তীতে বিগত শতাব্দির ’৮০’র দশকের মাঝামাঝি কলেজ সংলগ্ন মহাসড়কের পাশজুড়ে স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে শুরু করলে প্রথমে সাপ্তাহিক হাট ও পরবর্তীতে দৈনিক বাজার হিসেবে গুরুত্ব বাড়তে থাকে।
একসময় যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বাজারটির প্রসার ও প্রচার বাড়তে থাকলে বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররাও পণ্য নিয়ে আসতে শুরু করে। আর এভাবে চলতি শতকের শুরুতে বাজারটি সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বাজারটির শুরুতে নিজস্ব কোন জায়গা ছিল না। মহাসড়কের দুপাশে বিক্রেতারা তাদের নানা পণ্যনিয়ে সড়কের পাশেই কেনা-বেচাঁ করতো। পরবর্তীতে পণ্যের সমাগমবাড়ার সাথে সাথে ক্রেতাদের ভীড় বাড়তে থাকলে আস্তে আস্তে সড়কের দু’পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে অস্থায়ী ঘর নির্মান করতে থাকে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্যরা। এরপর এসব ঘর পাইকারদের কাছে আড়ৎ হিসেবে এককালীন মোটা অঙ্কের ও মাসিক নির্দিষ্ট টাকায় ভাড়া দেয়।
আর এভাবেই আস্তে আস্তে নিমমার এলাকায় মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় ৩’শ মিটার এলাকা দখলে নিয়ে কয়েক শত অস্থায়ী ঘর তুলে ভাড়ায় খাটাচ্ছে ওই প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্যরা রাজনৈতিক পরিচয়ে। আর এথেকে এককালীন মোটা অঙ্কের টাকাছাড়াও প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সচেতন মানুষ জানান, বাজারটির জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে নির্দিষ্টজায়গা বরাদ্দ ছাড়াও ব্যক্তি মালিকানাধীন বিশাল এলাকাজুড়ে অস্থায়ী স্থাপনা নির্মান করে শত শত ব্যবসায়ী ব্যবসা করলেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক সিন্ডিকেট সদস্যরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমান টাকার ভাড়া আদায় করছে।
তারা আরো বলেন, কখনো কখনো সড়ক ও জনপথ বিভাগের লোকজন মাইকিং করে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া বা উচ্ছেদের ঘোষনা দেয়। কখনো উচ্ছেদর করে। তবে, অজ্ঞাত কারণে উচ্ছেদের পরপরই আবারো দখলদাররা সেখানে স্থাপনা নির্মান করে ফেলে।
বাজারের একাধিক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র জানায়, মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে সড়ক বিভাগের বিশাল জায়গাজুড়ে কয়েক শত বিভিন্ন দোকান বা পাইকারী আড়ৎ রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে দখলদাররা ১ থেকে ৩/৪ লাখ টাকা অগ্রিমসহ প্রতি মাসে ২ থেকে ৫/৬ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। সর্বশেষ গত ৩০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিমসার এলাকায় মহাসড়কের উভয় পাশের সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিগ্রহনকৃত ভূমিতে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনাসমুহ উচ্ছেদের তারিখ নির্ধারিত ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র জানায়, এসময় রাজনৈতিক পরিচয়ধারী একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উচ্ছেদ অভিযান ঠেকায়। তখন প্রচারনা চালায়, আমের এই ভর মৌসুমে ব্যবসায়ীদের হঠাৎ উচ্ছেদে বিপুল পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হবে, তাই আপাতত আগামী কিছুদিনের জন্য উচ্ছেদ অভিযান স্থগীত করা হউক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুত্র আরো জানায়, এই উচ্ছেদ অভিযান স্থগীত করতেও মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি করা হয়। আর এভাবেই সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা করে একটি সিন্ডিকেট বিপুল পরিমান টাকা আয় করলেও সরকার বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিমসার বাজার এলাকায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ঘোষনা দিয়েও পিছিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, সড়ক ও জনপদের জায়গা দখল করে যারা বাজার কিংবা দোকান গড়ে তুলেছে, আমরা অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবো।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স