আবারও বহিরাগতদের হামলার শিকার বাকৃবির ২ শিক্ষার্থী
আপডেট সময় :
২০২৫-০৯-১৪ ২০:৪৪:২৪
আবারও বহিরাগতদের হামলার শিকার বাকৃবির ২ শিক্ষার্থী
বাকৃবি প্রতিনিধি:
আবারও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত ৩১ আগস্ট বাকৃবি শিক্ষার্থীদের উপর বহিরাগতদের হামলার পর এবার নারীসহ দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে বহিরাগতরা। এতে এক শিক্ষার্থী মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসা নেন।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ফাস্ট গেইট এলাকায় ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় বহিরাগত এলাকাবাসীর হাতে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী দুজন হলেন, কৃষি অনুষদের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রাশিদুল আলম রিফাত ও নাহার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেবি) কলেজের খেলার মাঠ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার দাবিতে এলাকাবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ ও মানববন্ধন করছিল। এ সময় দুই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। পরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে এলাকাবাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে রাশিদুল মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং বিশ্ববিদ্যালয় হেলথ কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসা নেন। নারী শিক্ষার্থী নাহারকেও বেল্ট দিয়ে পেটানো হয়।
রাশিদুল আলম রিফাত অভিযোগ করে বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় দেখি তারা রাস্তা আটকে আন্দোলন করছে। আন্দোলনকারীদের বললাম—আমরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাই।
আপনারা রাস্তা ব্লক করে আন্দোলন করছেন। আন্দোলন করুন, কিন্তু কারো অসুবিধা না হলে ভালো হয়। আপনারা আপনাদের দাবিতে আন্দোলন করবেন, আমরা তো বাধা দেব না। এ কথা বলতেই তারা বলে, আমি নাকি বেয়াদবি করেছি। এরপর তারা আমাকে মারতে আসে। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখাই, তবুও ৬–৭ জন মিলে আমাকে মারধর করে।
এসময় মারধরের শিকার অন্য শিক্ষার্থী নাহার বলেন, আমরা একসাথে ছিলাম। তারা রাস্তা আটকে আন্দোলন করলে আমরা খুলে দিতে বলি। তখন তার ওপর হামলা চালানো হয়। এসময় অনেকে মিলে বেল্ট দিয়ে মারতে থাকে। আমি ঠেকাতে গেলে তারা আমাকেও মারে।
জানা যায়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেবি) কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বহিরাগত এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে কলেজের খেলার মাঠ দখল করে রেখেছে। এতে চুরি ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধে নির্দেশ দেওয়ায় এলাকাবাসী বোমা মেরে কলেজ উড়িয়ে দেওয়া ও শিক্ষকদের হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়। প্রতিবাদে গত শনিবার কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মচারীরা আমরণ অনশনে বসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে তারা অনশন ভঙ্গ করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল আলীম বলেন, আমরা দোষীদের চিহ্নিত করতে এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়া আমরা গুরুতরভাবে দেখছি।
তিনি আরও বলেন, যে বিষয় নিয়ে বহিরাগত এলাকাবাসী মানববন্ধন করছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। গতকাল আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় আসার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু সমাধানে আসার চেষ্টা করছি। কিন্তু আজকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা শুনতে পেলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত সাব-ইনন্সপেক্টর (এস আই) মো মোখলেছুর রহমান বলেন, ঘটনার পর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় থানা থেকে আসা পুলিশ চলে গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ এখনো ঘটনাস্থলে রয়েছে। এই ঘটনায় দোষীদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩১ আগষ্ট রাত পৌনে ৮ টায় কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে বহিরাগতরা। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের আশেপাশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বহিরাগতরা। এসময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। এই ঘটনার রেশ না কাটতেই আবারও বাকৃবির দুই শিক্ষার্থীর উপর বহিরাগতদের হামলায় ঘটনা ঘটে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স