বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়ায় ইউনিয়নে বিলীনের পথে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চাপড়াকোটা ঢিবি। নবম-দশম শতাব্দীর একটি প্রাচীন কীর্তি। স্থানীয়ভাবে এটি চাপড়াকোট বৌদ্ধবিহার বা লোহানীপাড়া বৌদ্ধবিহার নামেও পরিচিত।
এখানে বর্ধন উপাধিধারী একটি রাজবংশের চারজন নৃপতির সন্ধান পাওয়া যায়। এখানে উদ্ধারকুত একটি প্রাচীন শিলালিপি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সরংক্ষিত রয়েছে। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
ঐতিহাসিক ভাবে প্রাপ্ত শিলালিপি অনুসারে জানা যায়, নবম-দশম শতাব্দীর দিকে শ্রীধন বর্শনের প্র পৌত্র, শ্রী পাইক বর্ধনের পৌত্র ও শ্রী বিক্রমবর্ধনের পুত্র শ্রী অংশ বর্ধন এই স্থানে একটি মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আনুমানিক ৪৫০ X ৫০০ বর্গফুট পরিমাপের বিহারটি আকারে আয়তাকৃতির। এই ধবংসাবশেষকে কেন্দ্র করে চারিদিকে এক কিলোমিটার করে লম্বা চারটি পরিখা রয়েছে।
চারদিকের পাতলা ইটের তৈরি বেষ্টনি দেয়াল রয়েছে, যা প্রায় ৭ ফুট (২.১ মিটার)। দেখে বোঝা যায় প্রাচীনকালে এটি একটি বৌদ্ধবিহার ছিল। এর উত্তর-দক্ষিণে দীর্ঘ আঙ্গিনা এবং টানা বারান্দা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিহারের আবাসিক কক্ষ। উত্তরদিকে বিহারটির প্রবেশদ্বার।
ধবংসাবশেষে অলঙ্কৃত ইট, পোড়ামাটির চিত্রফলক, একটি শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে। লিপিতত্ত্বের বিচারে এটি নবম-দশম শতকের বলে ধরা হয়।
চাপড়াকোটা ঢিবি বলতে মূলত রংপুরের বদরগঞ্জের লোহানীপাড়া বৌদ্ধবিহার (বর্তমানে) একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানকে বোঝানো হয়, তবে এটি চাপড়াকোটা ঢিবি নামেও পরিচিত, যেখানে খননকার্যে প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইটের তৈরি অবকাঠামোর নিদর্শন পাওয়া গেছে। এটি বদরগঞ্জ উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক এটি সৃকৃত।
এখানে প্রাচীন একটি দুর্গনগরী ছিল। এর নিরাপত্তার জন্য ছিল সুউচ্চ প্রাচীর এবং প্রাচীরের বাইরে প্রশস্তও সুগভীর পরিখা।
এ বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চাপড়াকোটা ঢিবি ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গিয়েছে। নেই তেমন কোনো চিহ্ন। তথ্য যাচাই বাছাই করে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের দিক তুলে ধরা হবে। তবে বড় পরিসরে খননকাজ করে জায়গাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং সেইসঙ্গে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’ চাপড়াকোটা ঢিবি প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে। তবে নিদর্শনগুলো ঠিক কোন সময়ের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য ছিল, বড় আকারে খননকাজ সম্পন্ন না হলে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়।