ঢাকা , শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণপাড়া (বলদার) কচু সারা দেশে কদর


আপডেট সময় : ২০২৫-০৯-১১ ২১:৪৭:৪০
ব্রাহ্মণপাড়া (বলদার) কচু সারা দেশে কদর ব্রাহ্মণপাড়া (বলদার) কচু সারা দেশে কদর

মোঃ অপু খান চৌধুরী। 

কচুকে একসময় শুধুই গরিবের খাবার বলা হতো। বর্তমান সময়ে কচু বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক ও পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ হওয়ায় এখন উচ্চ শ্রেণি মানুষ থেকে শুরু করে দেশের নামি-দামি হোটেলেও রান্না হচ্ছে কচু। কচু একমাত্র সব্জি, যে সব্জির পাতা শাক হিসেবে এবং এর শাখাপ্রশাখা কচুর লতি হিসেবে খাওয়া হয়। এ কারণে কচু ও কচুর লতির কদর বেড়েছে সারাদেশে।

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বলদার (বর্তমান সাহেবাবাদ) কচু সারা দেশেই কদর রয়েছে। পূর্বে থেকেই বলদার কচু সবার কাছে সুস্বাদু এবং এ অঞ্চলের মাটিতে কচুর ফলন ভালো হয়। তাই এই অঞ্চলের কৃষকেরা অন্যান্য সবজির পাশাপাশি কচু চাষ করে থাকে। কচু চাষে রোগ বালাই কম থাকায় এবং ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা কম খরচে বেশি লাভবান হন। 

বর্তমান সময়ে রোগ বালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে লোকজন এখন প্রচুর পরিমাণে কচু, কচু শাক এবং লতি খাচ্ছে। অতীতের কোন একসময় কচু-ঘেঁচু ছিল গরিবের খাবার। কোনো বাড়িতে কচুশাক, ওলকচু রান্না হলে ভ্রান্ত ধারণায় বলা হতো, ওই বাড়িতে অভাব। এসব কথা এখন শুধুই অতীত। এখন ধনি ও উচ্চবিত্তের লোকজন কচু ও কচুর লতিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রান্না করে খাচ্ছে। 

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ (বলদার) উচু জায়গা হওয়ার কৃষকেরা এ সময়ে প্রচুর পরিমাণ পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কচুর চাষ করে থাকেন। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন তাদের ফলানো কচু। পূর্বে এবং বর্তমান সময়েও দূরদূরান্ত থেকে মানুষ সাহেবাবাদ বা বলদার কচু ক্রয় করে নিয়ে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে। 

এ ছাড়াও, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সিদলাই ইউনিয়নের পোমকাড়া, বেড়াখোলা, লাড়ুচৌ ও দীঘিরপাড় ও সিদলাই, চান্দলা ইউনিয়নের দধিখলা, হুড়ারপাড়, বড়ধুশিয়া, মালাপাড়া ইউনিয়নের চন্ডিপুর, আসানগর, মালাপাড়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে কচু চাষ হয়। কিন্তু বলদার কচু সব যায়গায় সুস্বাদু হিসেবে পরিচিত। 

গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাহেবাবাদ বাজারে কচু বিক্রি করতে আসা কৃষক আজিজ মিয়া বলেন, এ বছর ১৫ শতক জমিতে কচু চাষ করেছি মোটামুটি ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিটি কচু ৫০ থেকে ৭০ টাকা বিক্রি করতে পারছি, এছাড়াও বাজারে লতির অনেক কদর রয়েছে। এবার ভালো ফলন হয়েছে বলে লাভ ও ভালো হবে আশাকরি।   

বাজারে কচু কিনতে আসা তফর উদ্দিন (৫০) জানান, এক সময় কচু আমরা খেতাম না। কচু রোগের প্রতিষেধক ও প্রচুর পরিমান ভিটামিনের কথা জেনে প্রায় সময়ে বাজার থেকে কচু বা লতি নিয়ে যাই।

কচু চাষি পোমকাড়া গ্রামের ফারুক বলেন, প্রতি বছরের মতো এবছরেও তার ১০ শতাংশ জমি চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত অনেক টাকার কচুর লতি বিক্রি করেছি। ফলন ভাল হয়েছে কিছুদিন পর কচু বিক্রি শুরু করবো। আশাকরি বাজারদর ভালো পাওয়া যাবে। 

এ ব্যপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মনিরুল ইসলাম বলেন, কচুতে মূল উপাদান আয়রন। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রেখে অক্সিজেন সরবারাহ স্বাভাবিক রাখে।

এছাড়া কচু ও লতিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ ক্যালসিয়াম বিদ্যমান রয়েছে। পুষ্টিসমৃদ্ধ অন্য উপাদান আছে কচুতে। এছাড়াও মানুষ কচু ও লতি খেলে রাতকানা রোগ এবং ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে। তাই এখন কচুর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।   

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মাসুদ রানা বলেন, কচু চাষে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। উৎপাদনে খরচের দ্বিগুণ লাভ হয় বলে কৃষকরা দিন দিন কচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মাঠ পর্যায়ে সকল চাষিদের সর্বাত্বক পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবং সরকারিভাবে চাষিদের সার বীজ দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।


 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ