অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে নিজস্ব সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভুয়া বিজ্ঞাপন দেখিয়ে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করছে রয়েল ইকোল্যান্ড হাউজিং
অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে নিজস্ব সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভুয়া বিজ্ঞাপন দেখিয়ে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করছে রয়েল ইকোল্যান্ড হাউজিং
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতিটা মানুষের জীবনেই একটি প্রধান স্বপ্ন থাকে নিজের জমিতে একটি বাড়ি হোক সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য অনেকেই চমকপ্রদক বিজ্ঞাপন দেখে ছুটে যায় আবাসন কোম্পানিগুলোর কাছে কিন্তু অধিকাংশ ব্যক্তি নিজের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে অনেক আবাসন কোম্পানির কাছে প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়, ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি এদের অধিকাংশই নেই সরকারী কোন অনুমোদন নিজস্ব কোন জমি।
অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা আর মুহূর্তেই অনেকের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে পথে বসে যাচ্ছে, অনেকেই ভয়ে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে চায় না, সম্প্রতি তেমনি একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান রয়েল ইকো ল্যান্ড লিমিটেড হাউজিং ভয়াবহ প্রতারণা উঠে এসেছে অনুসন্ধানে।
আঞ্জাম গ্লোবাল নামের এমএলএম কোম্পানির সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে শত কোটি টাকার প্রতারণা করার সিন্ডিকেটের নতুন টার্গেট হাউজিং ব্যবসা।
বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা-২০০৪ (সংশোধিত-২০১৫) এর আওতায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র নিবন্ধন গ্রহন করেনি রয়েল ইকো ল্যান্ড। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও বিধিমালা প্রতিপালন না করেই কেবল ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই ব্যবসা শুরু করেছে।
ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বাহিরে থাকা প্রবাসীদের কাছে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে জমি বিক্রির নামে প্রতারণা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মানুষকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে রয়েল ইকো ল্যান্ড নামের হাউজিং কোম্পানি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করছে, প্রবাসীদের জন্য বিশেষ অফার ও কিস্তি সুবিধার কথা বলে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ বাস্তবে নেই জমির মালিকানা, নেই সরকারি অনুমোদন-শুধুই ভাড়া করা জমিতে সাইনবোর্ড বসিয়ে প্রতারণার ভয়ংকর ফাঁদ।
প্রতারণার শুরু সাইনবোর্ড থেকে হাউজিং ব্যবসা : মাওয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রয়েল ইকো ল্যান্ড নামের কোম্পানির সাইনবোর্ড বসানো জমিগুলো অন্য মালিকের নামে রেকর্ডভুক্ত। কোম্পানিটি অল্প কিছু কৃষিজমি কিনলেও শতগুণ বেশি প্লট বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। তাদের ব্যবসার একমাত্র পুঁজি হলো-বিলাসবহুল অফিস, সুসজ্জিত মার্কেটিং টিম এবং মিডিয়ায় সুন্দরী নারীদের দিয়ে চমকপ্রদক বিজ্ঞাপন।
জীবনকে উপভোগ করতে চাইলে আপনার স্বপ্নের বাড়ী বানান রয়েল ইকো ভ্যালিতে, নতুন ঢাকায় গ্রামীন জীবন, জীবনকে উপভোগ করে নিন প্রাকৃতিক পরিবেশের মিশেলে নান্দনিক আধুনিকতা, প্রজেক্ট ভিজিট করার জন্য রয়েছে আমাদের নিজস্ব পরিবহন সুবিধা”-এরকম মনোমুগ্ধকর প্রচারনা চালিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে যাচ্ছে।
থেমে নেই দেশের বাহিরেও ইতিমধ্যেই তারা প্রবাসীদেরও প্রধান টার্গেট করে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা দুবাই, আবুধাবি ও কাতারে তথাকথিত একক আবাসন মেলার আয়োজন করে অনেক প্রবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। সেখানে প্রবাসীদের উদ্দেশে বলা হয়-“দেশে ফেরার পর আপনার নিজস্ব বাড়ি হোক নতুন ঢাকায়, গ্রামীণ পরিবেশে আধুনিক নান্দনিকতা।” সেই সময় অসংখ্য প্রবাসী অগ্রিম টাকা পরিশোধ করেছিল কিন্তু তারা তাদের জমি বুঝে পাননি।
স্বল্প মূল্যে প্লট বিক্রি ও সামান্য পরিমান কিস্তিতে পরিশোধের সিসটেম হচ্ছে তাদের প্রতারনার অন্যতম কৌশল। সাথে বুকিং দিলেই উপহার সামগ্রির অফার।
প্রবাসী সাইফুলের অভিজ্ঞতা : দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম রয়েল ইকো ল্যান্ডের প্রতারণার শিকার। তিনি অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখে ৫ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে একটি প্লট বুকিং করেন। দেশে ফিরে জমি দেখতে চাইলে কোম্পানি প্রথমে নানা অজুহাত দেখায়। পরে জানতে পারেন, সেই একই জমি আরও তিনজনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
“আমি ভেবেছিলাম দেশে ফিরে একটা ঘর করব। এখন দেখি আমার কষ্টার্জিত টাকাই নেই, প্লটও নেই। দেশে এসে প্রতারিত হলাম।”
গাজীপুরের গৃহিণী নাসরিন আক্তারও প্রতারিত হয়েছেন। তিনি বুকিং মানি হিসেবে ২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিছু কিস্তিও পরিশোধ করেন।
শারজাহতে কর্মরত একজন প্রবাসী বলেন, “আবুধাবি মেলায় আমি ১২ লাখ টাকা দিয়ে প্লট কিনেছিলাম। দেশে গিয়ে দেখি সেখানে কিছুই নেই। কেবল খালি জমি আর সাইনবোর্ড।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের ভিডিওতে অনেকেই কমেন্ট করে তাদের প্রতারণার কথা জানান, কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই তাদের হট লাইন নাম্বারে বিভিন্ন নারীরা কথা বলে কিন্তু যখনই আমার টাকা দেওয়া আছে এবং আমি আমার প্লট পাচ্ছিনা এ কথা বলার সাথে সাথে ফোন কেটে দেয়।
বিলাসবহুল অফিস : ভেতরে ঢুকলেই মনে হয় সবকিছু বৈধ এবং মার্কেটিং ও সেলস টিমের সদস্যরা বিভিন্ন ছলনাময়ী আবেগী কথাবার্তা বলে গ্রাহকদের সন্তুষ্ট করে ফেলেন যার কারণে অনেকেই খুব সহজেই প্রতারিত হয়ে যাচ্ছে এদের কাছ থেকে।
ইতি মধ্যে একাধিক গণমাধ্যমে ইকোল্যান্ডের প্রতারণার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে অর্থের বিনিময়ে অনেক সাংবাদিককে ম্যানেজ করে প্রতারণার তথ্য ধামাচাপা দিচ্ছেন।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউকের) একাধিক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের হাউজিং ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ। সাধারণ মানুষ যদি যাচাই না করে জমি কিনে প্রতারিত হয়, দায়ভার পুরোপুরি ক্রেতার ওপর চলে আসে, আপনার কষ্টে অর্জিত অর্থ দিয়ে জমি কেনার আগে অবশ্যই সবকিছু যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে।
বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজু্মারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এই প্রতারণা ঠেকানোর জন্য সর্বপ্রথম ক্রেতাদেরকে সচেতন হতে হবে যে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে জমি কেনার আগে সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে এবং সরকার থেকে বিশেষ নজরদারি প্রয়োগ করতে হবে তাহলে এই ধরনের প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রয়েল ইকোল্যান্ড লিমিটেডে হাউজিং এর ওয়েবসাইটে থাকা একাধিক কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি।
রয়েল ইকোল্যান্ড লিমিটেড হাউজিং এর ভুক্তভোগী ও প্রতারণার আরো তথ্য নিয়ে ভিডিও দ্বিতীয় পর্ব আসছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স