রাসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ, তারপরও বহাল তবিয়্যতে
আপডেট সময় :
২০২৫-০৯-০৯ ২১:৫৬:৪১
রাসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ, তারপরও বহাল তবিয়্যতে
মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:
রাজশাহী মহানগরের সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ নুর- ই-সাইদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বৈরাচারী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অভিযোগ উঠেছে।
তার অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে নগরবাসী মানববন্ধন ও রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছেন। নাগরিকদের অভিযোগ, সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের ফুপাতো ভাই এবং পরিবারের সদস্য হওয়ায় আবু সালেহ নুর-ই- সাইদ ২০১০ সালে রাজস্ব কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পান। এরপর থেকে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেন।
সাবেক মেয়র লিটনের আস্থাভাজন হওয়ার সুবাদে তিনি প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার পদটি অবৈধভাবে দখল করছেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা। সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন প্রভাবশালী কাউন্সিলর এবং অবৈধ ইউনিয়ন সভাপতি মালি দুলাল ও সেক্রেটারি আজমির আহমেদ মামুনের সহযোগিতায় নগর ভবনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি ।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোরপূর্বক আওয়ামী লীগের দলীয় অনুষ্ঠান, মিছিল-মিটিং ও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনে নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য তিনি সাবেক মেয়রের সহযোগিতায় বিভিন্ন বিভাগ/শাখায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডারদের অস্থায়ী ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেন। এসব ক্যাডাররা অফিসে কোনো কাজ না করে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা উত্তোলন করত।
জুলাই ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য নগর ভবনকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভাড়াটে ক্যাডার এনে নগর ভবনের গেস্ট হাউস ও শহরের নামী-দামী আবাসিক হোটেলে রাখা হয়।
কথিত আছে, তাদের মনোরঞ্জনের জন্য নগর ভবনে মহিলাদের ব্যবস্থা করা হতো। গেস্ট হাউসে তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো এবং তারা অফিস চলাকালীন সময়ে অস্ত্রের মহড়া দেখিয়ে কর্মকর্তা- কর্মচারীসহ নগরবাসীকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করত। বেশিরভাগ সময় এই ক্যাডাররা প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দপ্তরে মিটিং করত।
গত ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর দেশের পট পরিবর্তন হলেও আবু সালেহ নুর-ই-সাইদ নিজের লেবাস পরিবর্তন করে এখনও ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন। তার অধীনস্থ ভিন্নমতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর নিপীড়ন চালিয়ে স্বৈরাচার সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পাঁয়তারা করছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে জড়িত থাকার অভিযোগে সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়, যাদের মধ্যে প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। কিন্তু প্রশাসন আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
গত ১৫ এপ্রিল/২০২৫ তারিখে নগরবাসী প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার অপসারণের জন্য নগর ভবনের সামনে মানববন্ধন ও প্রশাসক মহোদয়কে স্মারকলিপি প্রদান করেন। এতকিছুর পরও তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় নগরবাসী ক্ষুব্ধ ও বিচলিত। নগরবাসী অবিলম্বে সকল স্বৈরাচারের দোসরদের অপসারণ ও বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
অন্যথায়, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাকে অপসারণ বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল সহ সকল প্রকার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ নুর-ই-সাইদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো তদন্ত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে নগরবাসী।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ নুর-ই-সাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স