ঢাকা , শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণপাড়ায় ছোট মাছ ধরার 'চাই' আন্তার কদর বাড়ছে


আপডেট সময় : ২০২৫-০৯-০৫ ২২:১৫:৩২
ব্রাহ্মণপাড়ায় ছোট মাছ ধরার 'চাই' আন্তার কদর বাড়ছে ব্রাহ্মণপাড়ায় ছোট মাছ ধরার 'চাই' আন্তার কদর বাড়ছে
 
মোঃ অপু খান চৌধুরী।
 
এ বছর বিভিন্ন সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে মাঠ-ঘাট, খাল-বিল-নদীতে পানি আর পানি। আর পানিতে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছের ছড়াছড়ি। ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামে গ্রামে এখন মাছ ধরার ‘চাই’ বা আন্তার খুব কদর বেড়েছে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় মাছ ধরার ‘চাই’ বা আন্তা নামে পরিচিত। যারা এই আন্তা বানাচ্ছেন তারা পরিচিত মাহালি নামে। কুমিল্লায় মাহালিরা এখন চাই বা আন্তা  তৈরিতে ব্যস্ত সময় পর করছেন। পেশাদার ও শখের জেলেরা মাছ ধরার আন্তা কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন হাটে-বাজারে বিক্রেতাদের কাছে।গতকাল বৃহস্পতিবার হাট দিনে উপজেলার সাহেবাবাদ বাজারে গিয়ে দেখা মিলে এ চিত্র। 
 
প্রতি বছর বর্ষার শেষে বিভিন্ন মাঠ-ঘাটে খাল- বিলে ডিম ছাড়ে বিভিন্ন জাতের দেশীয় মাছ। বর্ষা শেষে ওইসব মাছের ডিম কাদামাটিতে পড়ে থাকে এবং মাটির ভেতর রয়ে যায়। আবার বর্ষা শুরু হলে, বর্ষার পানিতে মাটি নরম হয়ে ওইসব ডিম থেকে মাছের জন্ম হয়। এখন এসব দেশি জাতের মাছগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে পানি জমে থাকা ধান ক্ষেতে আর ডোবা নালায়। এসব মাছ ধরতেই নানাজন হাট-বাজার থেকে আন্তা ক্রয় করছেন।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার হাট বাজারে গেলে দেখা যায়, হাতের তৈরি বিভিন্ন রকমের ছোট বড় আন্তা চাই ও পলই দোকানে সাজিয়ে রেখেছেন। আর তা কিনতে ভিড় করছেন অনেকেই। মাহালিরা এ সব জিনিস বিক্রি করছেন ছোট চাই ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা, মাঝারি ৭০০ টাকা, বড় আন্তা ১ হাজার টাকা থেকে প্রায় দেড় হাজার টাকা বিক্রি করছেন। সাহেবাবাদ বাজারে আসা দীর্ঘভুমি গ্রামের আশ্রাফ, নন্দিপাড়া গ্রামের খায়ের, আলী আহমেদসহ অনেকেই বলছেন, এবছর প্রতিটি আন্তার দাম বেশি নিচ্ছেন। বাজারে আসা বিক্রতারা বলছেন, সব জিনিসের দাম বেশি, আমাদের লাভ কম।
 
আন্তা কিনতে আসা আরিফুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি শশীদল ইউনিয়নের নাগাইশ গ্রামে। আমাদের গ্রামের আশপাশের ধানিজমি ও ছোট ছোট ডোবা নালা বন্যার পানিতে ভরে গেছে। আর সেখানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ। বর্ষাকালে মাছ ধরা আমার নেশা। একটা বড় সাইজের আন্তা নিলাম সাড়ে ৯ শত ৭৫ টাকা দিয়ে। 
 
আরেক জন আন্তা কিনতে আসা নাইঘরের শফিক  বলেন, বর্ষাকালে আমি কখনো মাছ কিনে খাই না। প্রতি বছর  বন্যা বা বর্ষায় বিভিন্ন খালে আন্তা, ফেলুন জাল, কুনি জাল দিয়ে মাছ ধরি। আজ আমি একটা ফেলুনজাল ও একটা আন্তা কিনলাম।
 
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ বাজারের মাহালি সমির দাস বলেন, আগের মতো তো আর আমাদের তৈরি জিনিসপাতির বিক্রি নাই। তবে বর্ষাকাল আসলে একটু বেশি মাছ ধরার আন্তা এবং ফলই বিক্রি হয়।

দেবিদ্বার উপজেলার বুড়ির পাড়ের মাহালি কমল দাস বলেন, এই কাজে আমাদের আর লাভ হয় না। একটা বাঁশের দাম ৪৫০ থেকে ৫ শত টাকা। তা দিয়ে ১২ থেকে ১৫ টা আন্তা তৈরি হয়, তা তৈরির মজুরি দিতে হয় ৬ শত থেকে ৮ শত টাকা। এতে তেমন লাভ হয় না। বাপ-দাদার কর্ম ছাড়তে পারি না। এতে সংসার চালানো মুশকিল। আমরা যা করছি, আমাদের ছেলেদের আর এই কর্ম করতে দেবো না।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাহেবাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা মাছ ভাতে বাঙালি মাছ ছাড়া ভাত খাওয়া পরিপূর্ণ লাগে বলে মনে হয় না, তাই গ্রামের মানুষ সাধারণত বিভিন্ন প্রযুক্তি অবলম্বন করে খালে বিলে নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ শিকার করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। অনেকেই আবার শখের বসে মাছ ধরে খেতে পছন্দ করে একসময় এই বাজারে প্রচুর পরিমাণ আন্তা,পল, কুনি জাল, ফেলুন জাল, খরজালসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ ধরার জিনিসপত্র পাওয়া যেত এখন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে তারপরও গত দুই বছর যাবত এই বাজারে প্রচুর পরিমাণ আন্তা পাওয়া যাচ্ছে।



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ