সেপ্টেম্বরেও নজরকাড়া দৃশ্য: কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেল পঞ্চগড়ে।
আপডেট সময় :
২০২৫-০৯-০৩ ২১:৫৯:০৫
সেপ্টেম্বরেও নজরকাড়া দৃশ্য: কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেল পঞ্চগড়ে।
মোঃ আব্দুল্লাহ আল মুকিম রাজু, পঞ্চগড় প্রতিনিধি।
বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া থেকে সোমবার ভোরে দেখা মিলেছে হিমালয়ের তুষারাবৃত পর্বতশ্রেণি কাঞ্চনজঙ্ঘার। সাধারণত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এই বিরল দৃশ্য চোখে পড়ে। তবে এবারের সেপ্টেম্বরেই সোমবার সকালে আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় হঠাৎ করেই ভেসে ওঠে বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা।
স্থানীয়রা জানান, ভোরের প্রথম আলো পড়তেই হিমালয়ের বরফে ঢাকা চূড়াগুলো লালচে ও সোনালি রঙে ঝলমল করে উঠে। এ দৃশ্য দেখতে সকাল থেকেই ভিড় জমে তেতুলিয়ার ডাকবাংলো চত্বর, মহানন্দা নদীর তীর এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে। স্থানীয় বাসিন্দা, ফটোগ্রাফার ও দূরদূরান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
তেতুলিয়ার বড়াবুড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, “আমরা শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অভ্যাসে আছি। কিন্তু এবারের সেপ্টেম্বরেই সোমবার সকালে এত স্পষ্ট দেখা যাবে, তা কল্পনাও করিনি। মনে হচ্ছিল, হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে ফেলা যায়।”
একজন পর্যটক জানান, “এ দৃশ্য আমাদের দেশের গর্ব। দেশের ভেতর থেকে হিমালয় দেখা সত্যিই অন্যরকম এক অনুভূতি।”
তেতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়- এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে পর্যটন শিল্পে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে হাজারো পর্যটক ভিড় জমায় তেতুলিয়ায়। তবে এবার সেপ্টেম্বরেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ায় আগাম মৌসুমেই ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন এ সীমান্ত এলাকায়। এতে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, স্থানীয় ব্যবসা ও পরিবহন খাতে চাঙা পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসযোগে পঞ্চগড় যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। নাবিল, হানিফ, এনা পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি পরিবহন সংস্থা নিয়মিত যাতায়াত করে। ভাড়া ৮০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে।
তেতুলিয়ায় পৌঁছে থাকার জন্য রয়েছে ডাকবাংলো, সরকারি-বেসরকারি অতিথিশালা এবং ছোট হোটেল। যারা কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য সরাসরি দেখতে চান, তাদের জন্য ডাকবাংলো চত্বর সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। এছাড়াও, মহানন্দা নদীর তীর, শালবাহান ও বড়াবুড়ি ইউনিয়ন থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সবচেয়ে আদর্শ সময়।
সূর্য ওঠার সময় চূড়াগুলো লালচে ও সোনালি রঙ ধারণ করে।
আবহাওয়া মেঘমুক্ত থাকতে হবে।
তেতুলিয়ায় এসে শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘাই নয়, দেখা যায় আরও বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান—
ভিতরগড় : প্রাচীন প্রত্নস্থল, ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয়।
মহারাজার দিঘি: স্থানীয় ইতিহাসের সাথে জড়িত মনোমুগ্ধকর জলাধার।
চা-বাগান: সীমান্তবর্তী তেতুলিয়ার চা-বাগান প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
বঙ্গলাবন্ধা জিরোপয়েন্ট: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শেষ প্রান্ত।
পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা বাংলাদেশে এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রতিবছর শীত মৌসুমে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয় তেতুলিয়া। এবার সেপ্টেম্বরেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়া নতুন এক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।
সোমবার ভোরে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে এ যেন এক অমূল্য উপহার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দিনগুলোতেও এভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যেতে পারে বলে আশা করছে স্থানীয়রা। আর এই সৌন্দর্য ঘিরে তেতুলিয়াকে ঘিরে নতুন পর্যটন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স