০২ টি বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ ০২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
০২ টি বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ ০২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর কদমতলী এলাকা হতে ০২ টি বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ ০২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
“বাংলাদেশ আমার অহংকার” এই- স্লোগান নিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই দেশের অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, ছিনতাই, অপহরণ ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে র্যাব সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে। এছাড়াও, সময়োপযোগী অভিযান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর অপরাধে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও আইনের আওতায় এনে সংস্থাটি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।
অবৈধ অস্ত্র, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও মাদক নির্মূলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১০ নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল ২৭ আগস্ট ২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ১৫.০০ ঘটিকার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, রাজধানীর কদমতলী থানাধীন রহমতবাগ এলাকার একটি ভাড়া বাসায় কয়েকজন ব্যক্তি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ অবস্থান করছে।
প্রাপ্ত গোপন তথ্য যাচাই ও নিশ্চিত হওয়ার পর, র্যাব-১০ দ্রুত সংশ্লিষ্ট এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে। সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন রহমতবাগ এলাকার একটি ৮ তলা ভবন ঘিরে ফেলা হয়। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ঐ ভবনের ৫ম তলায় বসবাসরত মোঃ বাচ্চু মিয়ার ভাড়াকৃত ফ্ল্যাটে কুখ্যাত অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী মোঃ শুকুর হোসেন ওরফে শ্যুটার শুক্কুর (৪২) অবস্থান করছে।
উল্লেখ্য, শ্যুটার শুক্কুর প্রায়ই মোঃ বাচ্চু মিয়ার ভাড়াকৃত ফ্ল্যাটে যাতায়াত করত এবং সেখানে অবস্থান করতো, যা গোয়েন্দা নজরদারিতে নিশ্চিত হওয়া যায়। এক পর্যায়ে মোঃ বাচ্চু মিয়া (৩৮) ফ্ল্যাট থেকে বের হলে তাকে ভবনের সামনেই আটক করা হয়। তার দখল হতে উদ্ধার করা হয় ৯৬ পিস ইয়াবা ও ৫ গ্রাম হেরোইন। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তার ভাড়াকৃত ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হলেও, সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মোঃ শুকুর হোসেন ওরফে শ্যুটার শুক্কুর আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে ৮ তলা ভবনের ছাদ থেকে পার্শ্ববর্তী ৬ তলা ভবনের ছাদে লাফ দেয়। এতে সে আংশিকভাবে আহত হয়। ছাদে অবস্থানরত র্যাব সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ঘিরে ফেলে এবং তল্লাশির সময় তার হাতে থাকা শপিং ব্যাগের ভিতর হতে লোড করা অবস্থায় ২টি বিদেশি পিস্তল. ২টি ম্যাগাজিন ও ১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। পরবর্তীতে আহত অবস্থায় শ্যুটার শুক্কুরকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে র্যাব হেফাজতে নেয়া হয়। পরবর্তীতে আটককৃতদের পরিচয় মোঃ শুকুর হোসেন ওরফে শ্যুটার শুক্কুর (৪২), পিতা- মৃত সামছুল হক, সাং- কুরমুরা, থানা- টঙ্গীবাড়ি, জেলা- মুন্সিগঞ্জ, এ/পি- পূর্ব জুরাইন, নবীনবাগ, রহমতবাগ, থানা- কদমতলী, ডিএমপি, ঢাকা ও মোঃ বাচ্চু মিয়া (৩৮), সাং- মাঝের চর (সায়েস্তাবাজার), থানা- বরিশাল সদর, জেলা- বরিশাল, এ/পি- রহমতবাগ, থানা- কদমতলী, ডিএমপি, ঢাকা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে, উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি পিস্তল পুলিশের হারিয়ে যাওয়া অস্ত্র, যা তারা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে নিজেদের হেফাজতে রেখেছিল।
উল্লেখ্য, অস্ত্রটি শনাক্ত এড়াতে তারা এর সিরিয়াল নম্বর ঘষে ফেলা ও বাট পরিবর্তনের মতো চাতুরীপূর্ণ কাজ করে, যাতে এটি পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র বলে চিহ্নিত না হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বর্ণিত আসামিরা শুধু মাদক ও অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেই জড়িত নয়, তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সক্রিয় সদস্য, যারা দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও অস্ত্র ব্যবসার মতো অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত এবং অস্ত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করত।
গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ শুকুর হোসেন ওরফে শ্যুটার শুক্কুর (৪২) একজন কুখ্যাত অপরাধী, যার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ও মাদক সংক্রান্ত মোট ৪টি মামলা রয়েছে, এবং সে ইতিপূর্বে ৪ বার গ্রেফতার হয়েছিল।
উল্লেখ যোগ্যভাবে, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে পূর্ব জুরাইনের নবারুণ গলিতে সংঘটিত একটি নৃশংস হত্যাকান্ডে সে সরাসরি জড়িত ছিল। সেদিন পুলিশের কাজে সহায়তা করায় সিএনজি চালক জাকির হোসাইন (৫০)-কে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা হয়। শ্যুটার শুক্কুর ও তার সহযোগীরা ভুক্তভোগীকে বুক, পেট ও পিঠে ছুরিকাঘাত করে এবং মৃত্যুকে নিশ্চিত করতে তার বাম পায়ের রগ কেটে দেয়। ঘটনার পরদিন, ১১/০২/২০২১ তারিখে ডিএমপি, ঢাকার কদমতলী থানার মামলা নং- ৩৫, ধারা- ১৪৩/৩২৬/৩০২/৩৪ পেনাল কোড, ১৮৬০ অনুযায়ী একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়, যেখানে শ্যুটার শুক্কুর প্রধান আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অপরদিকে, আরেক গ্রেফতারকৃত আসামি মোঃ বাচ্চু মিয়া (৩৮)-এর বিরুদ্ধেও মাদক সংক্রান্ত ২টি মামলা রয়েছে।
এই অভিযান ছিল র্যাব-১০ এর নিরবচ্ছিন্ন গোয়েন্দা তৎপরতা, দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও পেশাদারিত্বের একটি উদাহরণ। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্রের উৎস ও ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে র্যাবের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। যদি কোথাও অবৈধ অস্ত্র, মাদক বা অপরাধমূলক কর্মকান্ড সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা থাকে, তবে তা র্যাবকে জানিয়ে সহযোগিতা করুন। আপনার একটি তথ্য হতে পারে একটি পরিবার বা একটি জীবনের জন্য রক্ষাকবচ।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স