মোঃ ইকবাল মোরশেদ, স্টাফ রিপোর্টার।
জানা যায়, নওগাঁ শহরের কাজের মোর এলাকায় এই ঘটনাটি দেখা যায় এক মায়ের আর্তনাদ আমি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সন্তানকে আঁকড়ে বাঁচার আশা করেছিলাম। আজ আমি মা বিলকিস আক্তার (৭০) কিন্তু তা আমার কপালে জুটলো না। আমি এ আশা করেছিলাম আমার ছেলের কাছে কিন্তু তা হলো বিপরীত বর্তমানে আমার বসত হলো আমার বাড়ির গ্যারেজে, সিঁড়ির নিচে, তালাবদ্ধ গেটের সামনে।
নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় সোমবার বিকেলে ঘটে এমনই একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা, যা কাঁদিয়েছে অনেক পথচারীকেও। বিলকিস আক্তারের স্বামী প্রায় ৩০ বছর আগে শহরের কাজীর মোড়ে ১০ শতক জমির ওপর নির্মাণ করেছিলেন একটি দু’তলা বাড়ি। স্বামীর মৃত্যুর পর আইন অনুযায়ী বাড়ির অংশীদার হন স্ত্রী বিলকিস আক্তার ও তার তিন সন্তান—এক ছেলে ও দুই মেয়ে। কিন্তু সেই ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলাম সৌরভ এখন মায়ের জন্যই সেই বাড়ির গেট তালাবদ্ধ করে রেখেছেন।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার টার দিকে নিজ বাড়ির ফ্ল্যাটে ফিরতে গিয়ে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখে লোহার কাঁচি গেট এবং তালা ঝুলানো দেখতে পান বিলকিস আক্তার। ছেলেকে ফোন করে অনুরোধ করলেও সাফ জানিয়ে দেন, তুই দুই আনার মালিক, তুই গিয়ে পাথারে থাক, এই বাড়িতে তোর জায়গা হবে না।
সেই সময় থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ির নিচতলার গ্যারেজে বসে ছিলেন তিনি। ছোট একটি চেয়ার, সঙ্গে পানির বোতল—এই ছিল তার সম্বল। তিনি বলেন বললেন আমি রোজা আছি। কারন সকাল থেকে কিছু খাইনি। আমার ছেলে যে এমন হবে, ভাবিনি কখনো।
পরিবার সূত্র জানায়, স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তি নিয়ে শুরু হয় বিরোধ। মায়ের কাছে নিজের নামে জমি লিখে দিতে চাপ দিতে থাকে ছেলে সৌরভ। কিন্তু মা ও বোনেরা রাজি না হওয়ায় তাদের ওপর শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, ২০২৩ সালে বড় মেয়ে ও ছোট মেয়ে নিজেদের অংশ মায়ের নামে লিখে দেন। বর্তমানে কাগজে-কলমে বিলকিস আক্তার ওই বাড়ির প্রায় ৭০ শতাংশের মালিক।
এই বাড়ি আমার স্বামীর স্মৃতি। এখানেই বাকিটা জীবন কাটাতে চাই। এখন নিজের ছেলের কাছেই গৃহহীন আমি—কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বিলকিস আক্তার। তার বড় মেয়ের স্বামী ডা. আবুজার গাফফার বলেন, শাশুড়িকে তার ছেলে একাধিকবার গায়ে হাত তুলেছে। আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি, মামলা হয়েছে। মানবিকতার লেশমাত্র নেই তার মধ্যে। একজন মা যখন নিজের ছেলের কারণে বাড়ির সামনে বসে থাকেন, সেটা সমাজের ব্যর্থতা।