ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫ , ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জগন্নাথপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ কাঁথা.


আপডেট সময় : ২০২৫-০৬-১৯ ০৯:৪৫:১৫
জগন্নাথপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ কাঁথা. জগন্নাথপুরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ কাঁথা.


মাসুম আহমদ : আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ কাঁথা। একসময় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খেটে খাওয়া দিনমজুরপরিবারের গৃহবধূ ও কিশোরীদের হাতের ছোঁয়ায়ও তৈরি হতো গ্রামীণ কাঁথা।এই কাঁথায় তাদের হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলা হতো নানা নকশা। ঐতিহ্যবাহী এই গ্রামীণ কাঁথা কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

 
লেপ, কম্বল ও দামি চাদরের কারণে গ্রামের দারিদ্র পরিবারগুলোর গ্রামীণ কাঁথাসেলাইয়ের বাড়তি আয়ের উৎসটি এখন আর নেই।গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যে মিশে আছে গ্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন সূচি শিল্প। সেইসাথে এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে গ্রামের আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড।সুঁইয়ের ফোঁড়ে সুতা বুননের মাধ্যমে পল্লী নারীদের উপার্জন হতো ভালোই।

 
গ্রামের বিয়েতে কন্যার শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হতো কাঁথা। এছাড়া শীতনিবারণের জন্য কাঁথা সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতেন গ্রামাঞ্চলের নারী ওকিশোরীরা। কিন্তু সেই দিন আর নেই। গ্রামের নারীদের আড্ডা আর খোশগল্পের ছলেকাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে এখন আর সচরাচর আর চোখে পড়ে না।পুরাতন শাড়ি, লুঙ্গি বা ওড়নার কাপড়ে রঙ-বেরঙের সুতা দিয়ে সুনিপুণ হাতেতৈরি করা হতো কাঁথা। গ্রামের নারীরা মনের মাধুরী মেশানো অনুভ‚তিতেনান্দনিক রূপ আর বর্ণ বৈচিত্রে এই গ্রামীণ কাঁথা বুনন করতেন। নারীদের দক্ষ হাতেসুঁই আর লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, হলুদসহ হরেক রঙের সুতায় নান্দনিক বৈচিত্রেসেলাই করা হতো কাঁথা। সুঁই-সুতার এফোঁড়-ওফোঁড় করার মাধ্যমে ফুল-ফল,গাছ-লতাপাতা, জিরা গাঁথুনি, চেইন গাঁথুনি, মরিচ লাইট গাঁথুনিসহবিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলা হতো কাঁথায়। এছাড়া আপন মনের ইচ্ছায়দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র কাঁথায় ফুটিয়ে তুলতেন শিল্পীরা।

 
তারা নিজেরাইএর শিল্পী, রূপকার এবং কারিগর। এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে ছিল আর্থ-সামাজিককর্মকান্ডও।সময়ের ব্যবধানে নতুনত্বের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে হাতের সেলাইয়েগড়া এই কাঁথার ঐতিহ্য। বড় বড় কারখানায় তৈরিকৃত দেশি-বিদেশি রং-বেরঙেররেডিমেড লেপ-কম্বলের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গ্রামীণ শিল্পটি। কালেরবিবর্তনে আজকাল আর চোখে পড়ে না গ্রামীণ এ কাথাঁ সেলাইয়ের দৃশ্য। প্রত্যন্তঅঞ্চলের অভাবী নারীরা সংসারের সব কাজ শেষে অবসরে কাঁথা সেলাইয়ের কাজকরতেন। প্রকারভেদে একটি কাঁথা সেলাই করতে ১০ দিন থেকে এক মাস পর্যন্তসময় লাগে। আর মজুরি হিসেবে মিলতো ৬শ’ হতে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত।

 
নিজেদের সংসারে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সন্তানদের বায়না পূরণ ও লেখাপড়ার খরচমেটাতে বেশ ভ‚ মিকা রাখতো হাতে তৈরি এই কাঁথা।জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কাঁথা সেলাইকারী আমেনা বেগম ও রেখাবেগম বলেন, আগে আমরা সবসময় নতুন বা পুরাতন কাপড় দিয়ে কাঁথা সেলাইকরতাম। এখন দেশি-বিদেশি কম্বল, লেপ এসব আসায় কাঁথা সেলাইয়ের রীতিহারিয়ে গেছে। সংসারের কাজের ফাঁকে কাঁথা সেলাই করে আয়-রোজগার হতো,এখন তা আর হয় না। এখন মানুষ কাঁথা সেলাই করে নিতে চায় না। মানুষের বাড়িবাড়ি গিয়ে খুঁজে একটা কাঁথা নিয়ে এসে সেলাই করলে সামান্য টাকা পাই।

 
সেই টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে পারি না। নিজের কাপড়কিনতে পারি না। পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারি না।একই এলাকার শিক্ষার্থী জান্নাতুন খাতুন বলে, আমি পড়াশোনার পাশাপাশিকাঁথা সেলাইয়ের কাজ পেলে তা করি। সেই টাকা পড়াশোনার কাজে লাগাই।

 
সামাজিক সংগঠন ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুরের স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামীম আহমদ জানান, দারিদ্র পরিবারের নারীদেরসংসারের বাড়তি আয় ছিল গ্রামীণ কাঁথা সেলাই। তবে যুগের সাথে তালমিলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই পেশা। অর্থনৈতিককর্মকান্ড হিসেবে উৎপাদন, আয় বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্র হিসেবেএই খাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এলে হারানোঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে ঋণ সহায়তার পাশাপাশি বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।




 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ