রাজশাহী নগরীর শ্যামপুর বন্ধ ঘাটে বালু চুরি মতিহার ও বোয়ালিয়া থানা অঞ্চলে মাদকের গডফাদাররা সক্রিয়, যা বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা
রাজশাহী নগরীর শ্যামপুর বন্ধ ঘাটে বালু চুরি মতিহার ও বোয়ালিয়া থানা অঞ্চলে মাদকের গডফাদাররা সক্রিয়, যা বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীর কাটাখালী থানার শ্যামপুর বন্ধ বালুঘাটে গত প্রায় ১সপ্তাহ্ধসঢ়; যাবত বালুবাহি ট্রলারে চুরি করে বালু উত্তলোন করছে একটি অসাধু চক্র। এ নিয়ে বালু ব্যবসায়ীদের মধ্যে চাপাক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। বালু চুরি বন্ধে জেলা প্রশাসন, বিজিবি, ইউএনও পবা-সহ সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করা হলেও বন্ধ হয়নি বালু চুরি। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকারী রাজস্ব খাত। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। শুধুমাত্র লাভবান হচ্ছে অসাধু চক্রটি।
স্থানীয়রা জানায়, বালু উত্তোলনের দ্বিতীয় দিনে প্রশাসনের নির্দেশে নদী থেকে পাইপ সরিয়ে নেন অসাধু চক্রটি। এরপর ইউএনও পবা সরেজমিনে শ্যামপুর বালু ঘাটে আসেন, অবৈধভাবে বালু উত্তলোন না করার জন্য সতর্ক করেন চক্রটিকে। কিন্তু সোমবার (২জুন) রাত থেকে শুরু করে মঙ্গলবার ভোররাত পর্যন্ত ৬ ট্রলার বালু উত্তোলন করেছে চক্রটি। যাহার মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা।
সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান, গত ৫/৯ মাস পূর্বে বৈধ বালুঘাট চলাকালীন সময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালু উত্তোলনের সময় সিমা নিদ্ধারণ করা ছিল। এখন বালু চুরি শুরু হচ্ছে রাত থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী সারারাত নদীর পাড়ে বিজিবির টহল থাকে।
সাবেক একজন ইজারাদার বলেন, শ্যামপুর বালুঘাট টেন্ডার নেওয়ার পরে বালু উত্তোলন শুধু করেছিলাম। তারপরও বিজিবি সদস্যরা ঘাটে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বিজিবি-১, স্যারকে ইজারপ্রাপ্তির কাজগপত্র জমা দিবেন এবং তালাইমারী ক্যাম্পে ১ কপি দিয়ে আসবেন। কিন্তু হটাৎ কি এমন হলো যে, সকল আইনকে উপেক্ষা করে চলছে বালু চুরির মহাৎসব।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে আরাফাত আমান আজিজ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পবা জানান, সরেজমিনে গিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তারপরও যদি বালু চুরি বন্ধ না হয়। জেলা প্রশাসনকে অবগত করেন। জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), মোঃ মহিনুল হাসান জানান, শ্যামপুর বালুঘাটে অবৈধবাবে বালু উত্তোলন বন্ধে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, নিরাপত্তা জনিত কারনে রাত ৯টার পরে পদ্মানদীর পাড়ে জণসাধারণকে বসতে দেন না বিজিবি সদস্যরা। কড়া নিরাপত্তা ও নজরদারীর মধ্য দিয়েই ভারতীয় সিমান্ত ১০নং পিলার পদ্মার চরের কুখ্যাত মাদক চোরাকারী চক্রের মূল হোতা এবং একাধীক মাদক মামলার আসামী ইমরানের ছেলে কুখ্যাত মাদক ডিলার আক্কাস চক্রের মাদক পাচার অব্যাহত রয়েছে।
সেই সাথে মাদকের ডিলার পদ্মার মিডিল চরের সাদ্দাম, মিনা, রায়হান, সোহেল, কুবাতের ছেলে সাগর, কাশেমের ছেলে বরজাহান ও তার ৪ভাই, (তারা হুন্ডি ব্যবসার সাথেও জড়িত), আলমের ছেলে বাক্কার, জালালের ছেলে আইযুব চক্রটিও সক্রিয়। তাদের প্রত্যেকেই চরে এবং নগরীর মতিহার থানার মিজানের মোড়ে বাড়ি রয়েছে। তারা ভারত সিমান্ত থেকে মাদক চোরাচালান করে। সেই মাদক রাজশাহী-সহ ছড়িয়ে যাচ্ছে সারা দেশে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদক ডিলার আক্কাসের এক ঘনিষ্ট সহযোগী জানায়, আক্কাসের বডিগার্ড শাহীন তার সার্বিক সহযোগীতায় বাঘা থানার মুক্তারপুর, আলাইপুর, চারঘাট থেকে শুরু করে রাজশাহী মহানগরীর নোঙ্গর পর্যন্ত মাদকের চালান নিয়ন্ত্রণ করছে আক্কাস এবং তার প্রতিপক্ষ কুখ্যাত মাদক চোরাকারবারী আইয়ুব।
তিনি আরও বলেন, মহানগরীর নোঙ্গর ও শিমলা এলাকায় আক্কাসের মাদক রক্ষাবেক্ষণ করে রাসিক ৯নং ওয়র্ডের সাবেক আ’লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ও তার দুই ভাই। নোঙ্গর ও শিমলাপার্কের কাশবনের ভেতর দিয়ে ফেনসিডিল ও ট্যপেন্টাডল ট্যাবলেটের বড় বড় চালান তুলছে বলেও জানান তিনি। ৯নং ওয়র্ডের স্থানীয়দের দাবি, গত প্রায় ১বছর পূর্বে সাবেক আ’লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর ও তার দুই ভাইয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী মাদক ব্যবসা বন্ধের দাবিতে নিজ এলাকায় মানববন্ধন করেছিল। কিন্তু অসৎ উপায়ে শূণ্য থেকে টাকাওয়লা হওয়ায় তারা পূর্বের কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন বলেও জানান তারা।
এছাড়া, মতিহার থানার মহব্বতের ঘাটের পূর্বে বাংগিতলা মসজিদের সাথে মাদক কারবারী টিটু, মতি, মানিক। ডাসমারী এলাকার বাবু, জাকা, ক্যারাসিন রফিকুল ও তার সালা রিয়াজ, মালেকের ছেলে হাবিল। মিজানের মোড়ের সুমন ও রঙ্গিলা (দম্পত্তী), কাদো, কামরুল, মিরা, মৌসুমি, আসলাম, ইয়াসিন সহ খুচরা ও পাইকারী শতাধীক মাদক কারবারীরা রয়েছে। স্থানীয় ও খুচরা মাদক কারবারীদের দাবি, এসব মাদক কারবারীরা আটক হলে মতিহার বোয়ালিয়া অঞ্চলে ৯০% মাদক নিমূল হবে।
অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন ও মাদক চোরাচালানের বিষয়ে বিজিবি-১, এর মুখপাত্র’র মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, তালাইমারী ক্যাম্পের সাথে যোগাযোগ করে জানুন। নগরীর মতিহার থানার তালাইমারী ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডারের মুঠো ফোনে জানতে চাইলে, তিনি জানান, আমরা সারারাত টহল দেই।
তিনি দাবি করেন, আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ৫০/১০০ বোতল ফেনসিডিল তুলতে পারে। তবে বড় কোন চালান তুলতে পারেনা মাদক চোরাকারবারীরা। চিহিৃত মাদক কারবারীরা যত শক্তিশালী হোক না কেন, তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
মাদকের ব্যপারে জানতে চাইলে আরএমপি পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ- পুলিশ কমিশনার (সদর), মোহাম্মদ রকিবুল হাসান ইবনে রহমান জানান, মাদকের উপর জিরো টলারেন্স ঘোষনা রয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। চিহিৃত মাদক কারবারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স