লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
হবিগঞ্জ জেলার ৪টি উপজেলার ৩৪টি চা বাগান দীর্ঘ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় শুকিয়ে গেছে বাগানের ছোট-বড় লেক ও ছড়া গুলো। এতে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নিরুপায় হয়ে শ্রমিকরা এলাকা থেকে কলস দিয়ে পানি সংগ্রহ করে বাগানে দিচ্ছেন এদিকে, বাগানের চা গাছে মশা ও পোকা-মাকড় বাসা বাধছে। বাগানের এমন করুণ দশায় শ্রমিকরাও হতাশ হয়ে পড়েছেন। এতে করে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন চা বাগানের মালিকরা।
চা বাগান সূত্র জানায়, জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, মাধবপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় ফাঁড়িসহ ৩৪টি চা বাগান রয়েছে। বাগানের আয়তন ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৩২৪ হেক্টর। প্রতি হেক্টর জমিতে ২০০ থেকে ২৫০ কেজি চা-পাতা উৎপাদন হয়। প্রতি বছর মার্চ মাস থেকে শুরু হয় চা-পাতা উত্তোলন। চলতি বছরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখনো চা বাগানে চা-পাতার কুঁড়ি বের হচ্ছে না। তীব্র রোদের কারণে চা বাগানে আশঙ্কাজনক হারে চা পাতার উৎপাদন কমেছে অন্যদিকে, এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দুই লাখ। এর মধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিক চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
বাগানে কাজ না পেয়ে বাকিদের জীবিকার জন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে হচ্ছে। বছরের মার্চ থেকে চা পাতার উৎপাদন শুরু হয়। চলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। এখানে নতুন কুঁড়ি না আসায় গত বছরের এই সময়ের তুলনায় চলতি বছর চায়ের উৎপাদন কমেছে। ভরা মৌসুমে গাছে নতুন কুঁড়ি না থাকায় কমে গেছে শ্রমিকের কাজ। শ্রমিকরা পাহাড়ের নিচু এলাকা থেকে কলসি দিয়ে পানি এনে গাছে নতুন কুঁড়ি গজানোর চেষ্টা করছেন। চোখে-মুখে স্বপ্ন নিয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছে বৃষ্টির আর নতুন কুঁড়ির আশায়। সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না। পানির জন্য অনেক শ্রমিক দূর-দূরান্ত থেকে পানি এনে খাচ্ছেন। এমনকি গোসল করতে তাদের যেতে হচ্ছে দূরের বস্তিতে। বাংলো ও স্টাফ কোয়ার্টারেও নেই পানি।
চা-শ্রমিকরা বলেন, ‘বাগানে কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। এখন কেউ বাগানে কাজ না করে বাইরে বস্তি ও শহরে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু চা গাছে পাতা না আসলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে’ প্রতি বছরে মার্চ মাস আসলে আমরা দিনভর চা-পাতার কুঁড়ি উত্তোলন করি কিন্তু এ বছর বৃষ্টি না হওয়াতে চা-পাতার কুঁড়ি বের হচ্ছে না। যার কারণে আমাদের কাজ ও মজুরি কমে গেছে আমরা গোসল ও খাওয়ার পানি পাচ্ছি না।
চা-পাতা না তুললে বাগান কর্তৃপক্ষও মজুরি দিবে না দেউন্দি টি কোম্পানিসহ জেলার প্রতিটি চা বাগানে অনাবৃষ্টির কারণে চা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দিন দিন লোকসানের পাল্লা ভারী হবে।
মাধবপুর উপজেলার নোয়াপাড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ আহমেদ জানান, গত ২০২৪ সালে তীব্র খরা ও শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে বাগানগুলোতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চা-পাতা উৎপাদন কম হয়। চলতি বছর বৃষ্টি না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। শ্রমিকরা কলস দিয়ে পানি সংগ্রহ করে বাগানে পানি দিচ্ছেন। বিশাল বাগান কৃত্রিম পানি দিয়ে পোষানো সম্ভব নয়, চলতি বছর তীব্র খরা ও অনাবৃষ্টির কারনে বাগান গুলো পুড়ে চা পাতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।