ঢাকা , মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫ , ১৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিকেট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ ০৬ জনকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ৩১৪টি সিটের ৮২টি টিকেট ও বিপুল পরিমান মোবাইল সিমসহ গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট সময় : ২০২৫-০৩-২৭ ২০:৪৩:৪৮
টিকেট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ ০৬ জনকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ৩১৪টি সিটের ৮২টি টিকেট ও বিপুল পরিমান মোবাইল সিমসহ গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। টিকেট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ ০৬ জনকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ৩১৪টি সিটের ৮২টি টিকেট ও বিপুল পরিমান মোবাইল সিমসহ গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।


 
নিজস্ব প্রতিবেদক 

টিকেট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ ০৬ জনকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ৩১৪টি সিটের ৮২টি টিকেট ও বিপুল পরিমান মোবাইল সিমসহ গ্রেফতার করেছে র‍্যাব।
 
র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‍্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, কিশোর গ্যাং, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র‍্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতারণামূলক কার্যক্রম বন্ধে সর্বদা কাজ করে চলেছে র‍্যাব।
 
বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে রেলভ্রমন একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে সকলের নিকট সুপরিচিত। সাচ্ছন্দে যাতায়াতের জন্য ট্রেনের কোন বিকল্প নাই। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণের বড় একটি অংশ নিরাপদ যাত্রার মাধ্যম হিসেবে ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতিকারী ও টিকেট কালোবাজারি চক্রের দৌরাত্মে স্বস্তিকর রেলভ্রমনের টিকেট প্রাপ্তি অনেক সাধারণ জনগণের জন্য অস্বস্তি, চিন্তা ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইনে টিকেট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রি হতে দেখা যায়। টিকেট কালোবাজারিরা বিভিন্ন কৌশলে ট্রেনের টিকেট অগ্রিম সংগ্রহ করে অবৈধভাবে নিজেদের কাছে মজুদ করে রেখে সাধারণ যাত্রীদের নিকট ২/৩ গুন বেশি দামে টিকেট বিক্রি করছে। সাধারণ যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকেট না পাওয়া এবং টিকেট কালোবাজারী কর্তৃক অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত ট্রেনের টিকেট কালোবাজির চক্রের সদস্যদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ ও কালোবাজারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র‍্যাব-
 
এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র‍্যাব- এর একটি আভিযানিক দল ২৬/০৩/২০২৫ তারিখ রাতে রাজধানীর খিলগাঁও বনশ্রী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী চক্রের সদস্য ১। মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (২৯), পিতা- মৃত মোঃ নজরুল ইসলাম, সাং- রাজাপুর, থানা- ঝালকাটি, জেলা- বরিশালকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃত রিয়াজুল এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর একটি অভিযানে ২৭/০৩/২০২৫ তারিখ ভোরে র‍্যাব-১১ এর সহায়তায় ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী চক্রের মূলহোতা ২। মোঃ সেলিম (৫৩), পিতা- আব্দুর রশিদ, সাং- উত্তর সরেলিয়া, জেলা- খুলনা’কে রাজধানীর ডেমরা থানার ডগাইর বাজার এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ধৃত আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে ২৭/০৩/২০২৫ তারিখ সকালে র‍্যাব-৩ কর্তৃক পৃথক অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন হতে উপরোক্ত আসামিদের সহযোগী কালোবাজারী ট্রেনের টিকেট বিক্রয়কারী সদস্য ৩। সোহেল মিয়া (৩৬), পিতা- মৃত হারুন মিয়া, থানা ও জেলা- শেরপুর, ৪। তৌফিক (২৮), পিতা- মৃত সৈয়দ মিয়া, থানা-বাজিদপুর, জেলা-কিশোরগঞ্জ, ৫। মাইনুল ইসলাম (২৪), পিতা- জসীম, থানা- বাজিতপুর, জেলা- কিশোরগঞ্জ, ৬। রাকাতুল ইসলাম (১৯), পিতা- রাইস মিয়া, থানা- করিমগঞ্জ, জেলা- কিশোরগঞ্জ’দের গ্রেফতার করা হয়। ধৃত আসামিদের নিকট হতে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের সর্বমোট ৩১৪টি সিটের ৮২টি ট্রেনের টিকেট, বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর ৯৫টি সীম, ১০টি মোবাইল ফোন, ০১টি এনআইডি, ০১টি ঘড়ি, ০৪টি এটিএম কার্ড, ০১টি সিপিইউ, ০১টি মনিটর, ০১টি কি-বোর্ড, ০১টি মাউস এবং নগদ ৭১০/- টাকা উদ্ধার করা হয়। 
 
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামিরা জানায়, তারা সংঘবদ্ধ টিকেট কালোবাজারী চক্রের সদস্য। ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকেটের বিপুল চাহিদা থাকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ পরস্পর যোগসাজশে অনলাইনে অল্পমূল্যে টিকেট ক্রয় করে টিকেট প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের নিকট উচ্চমূল্যে গোপনে টিকেট বিক্রি করে। তারা মূলত ট্রেন ছাড়ার ৩/৪ ঘন্টা আগে থেকে অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রির তৎপরতা শুরু করে। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে মজুদকৃত কালোবাজারি টিকেটের দাম তত বাড়তে থাকে। তারা সাধারণত ২/৩ গুন মূল্যে টিকেট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকেটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। গ্রেফতারকৃত আসামিরা তিস্তা এক্সপ্রেস, এগারো সিন্ধু প্রভাতি, মহানগর প্রভাতী, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, জামালপুর এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস এই সকল ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে থাকে। 
 
ধৃত আসামি মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (২৯) জানায় সে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে এবং কম্পিউটার ও গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। ধৃত রিয়াজ ও মূলহোতা সেলিম একই এলাকায় বসবাসের সুবাদে তাদের পরিচয়ের মাধ্যমে সেলিমের প্ররোচনায় রিয়াজ অবৈধ ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িয়ে পড়ে। ধৃত মোঃ সেলিম (৫৩) অপর আসামি মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (২৯)’কে ঈদ উপলক্ষে অনলাইন হতে টিকেট কাটার জন্য অগ্রীম ৯৫,০০০/- হাজার টাকা প্রদান করে। রিয়াজ ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজ হতে সিম বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দেখে তাদের নিকট হতে প্রতিপিস সিম ১০০/- টাকা ও প্রতিটি এনআইডি কার্ড ২০/- টাকা করে অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় করে ঐ সকল সিম ও এনআইডি দিয়ে রেল সেবা অ্যাপস এ আইডি খুলে বিভিন্ন গন্তব্যের রেল টিকেট সংগ্রহ করে মূলহোতা সেলিমকে প্রদান করতো। ধৃত আসামি সেলিম মাঠপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত অন্য সদস্যদের রেলষ্টেশন এলাকায় নিয়োগ করে যাদের টিকেট প্রয়োজন তাদের খুজে বের করে এবং তাদের নিকট উচ্চমূল্যে টিকিট বিক্রয় করে। 
 
ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।




 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ