ঢাকা , শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকাশ অপেক্ষায় পাপিয়া সুলতানা পলাশী’র ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ”বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-২৪”

বিশেষ প্রতিনিধি
আপডেট সময় : ২০২৫-০৩-১৪ ১৫:৪৯:২০
প্রকাশ অপেক্ষায় পাপিয়া সুলতানা পলাশী’র ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ”বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-২৪” প্রকাশ অপেক্ষায় পাপিয়া সুলতানা পলাশী’র ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ”বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-২৪”


বিশেষ প্রতিনিধি :

কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা তরুণ প্রবন্ধকার ও লেখিকা পাপিয়া সুলতানা পলাশী’র ইতিহাস বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ ”বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-২৪” প্রকাশ অপেক্ষায় রয়েছে। 
বইটি প্রকাশিত হচ্ছে আরডিএম মিডিয়া এন্ড প্রকাশনী থেকে। ”বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন-২৪”-এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোহাম্মদ আরিফ হোসেন। তিনটি অধ্যায়ের গ্রন্ধটিতে স্থান পেয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন-২০২৪-এর ধারাবাহিক ইতিহাস, যা একজন পাঠকের মনকে মুগ্ধ করে ধরে রাখবে পরবর্তি পাঠের জন্য। ২৫৬ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির মূল্য ধরা হয়েছে ৬৮০ টাকা। 

গ্রন্থটি সম্পর্কে প্রবন্ধকার পাপিয়া সুলতানা পলাশী বলেন, “স্বাধীনতার পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশে যতগুলো আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২০২৪ এর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে চার দফা দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি দেয়। ২ থেকে ৬ জুলাই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, মহাসড়ক অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করে। ৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকায় গণপরিবহন বন্ধ এবং রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি চালায় এবং পরবর্তীতে সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয় যা "বাংলা ব্লকেড" কর্মসূচি নামে পরিচিত। বাংলা ব্লকেড চলাকালীন রাজধানীতে শুধু মেট্রো রেল চালু ছিল। পরবর্তী দিনগুলোতেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একই কর্মসূচিত পালিত হয়। এইসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার শিকার হয়। এসব বিষয়গুলো সযতনে তুলে ধরা হয়েছে প্রবন্ধের ধারাবাহিকতায়। যা বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অসামান্য কাজ বলে পরিগন্য হওয়ার যোগ্যতা রাখবে বলে আশা ও বিশ্বাস রাখি।”

প্রবন্ধকার আরো বলেন, “২০২৪-এর কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো বাংলাদেশে সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। ২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন আবার নতুনভাবে আলোচনায় আসে। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। ঐ পরিপত্রের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সকল কোটা বাতিল করা হয়েছিল। সেই সব বিষয়গুলো তুলে ধরতে কোন কৃপণতা করা হয়নি এই গ্রন্থালোচনায়। আমি সর্বোচ্চ সতর্ক আর নিরেপেক্ষভাবে সেই বিষয়গুলো পাঠকের জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছি। আমার সুদৃঢ় বিশ্বাস বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে যাদের আগ্রহ ও পিপাসু জ্ঞান রয়েছে, এই গ্রন্থটি তাদের সেই পিপাসা নিবারণে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবে।”

পাপিয়া সুলতানা পলাশী আরো বলেন, “২০২৪-এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ জাতি-রাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি অনিবার্য মাইলফলক। একটি দেশ ও জাতি তার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পরিচালিত হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্বাভাবিক হলো জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছার বিপরীতে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মতির মাধ্যমে শাসনের কথা বলে। কিন্তু স্বৈরাচারী শাসকরা শক্তির জোরে শাসনক্ষমতা টিকিয়ে রাখে। জোর যার মুল্লুক তার নীতির মাধ্যমে শাসকরা সবসময় একটা বিভীষিকার বেড়াজাল তৈরি করে রাখে যার শিকার হয় সাধারণ মানুষ। সেই ধারাবাহিকতার চুম্বক অংশগুলো উপস্থাপিত হয়েছে এই গ্রন্থের প্রতিটি প্রবন্ধ আলোচনায়।”

প্রন্থালোচনাকালে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করে, যার ফলে জুলাইয়ের শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন পুনরায় জোরদার হয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভের পর, ১৫ জুলাই আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর উত্তেজনা বেড়ে যায়। পরবর্তী দিনগুলোতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, যার মধ্যে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি, সেই সাথে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র, যুব ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের সাথে সহিংস সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষের ফলে অসংখ্য মানুষ নিহত হয়, যার মধ্যে রয়েছে আন্দোলনকারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, দলীয় সদস্য, পথচারী ও শিশুরাও। আগস্টের শুরুর দিকে এই সহিংসতার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে, প্রাণহানির সংখ্যা দুইশ থেকে ছয়শ পর্যন্ত অনুমান করা হয় এবং আহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। এতো ব্যাপক প্রাণহানি সত্ত্বেও সরকার এই গণহত্যার দায় অস্বীকার করে এবং সহিংসতার জন্য অন্যান্য কারণকে দায়ী করে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ঘটনাবলি তখন থেকে ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এর প্রভাব সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছিল, তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আরো অভিযোগ ছিলো গণহত্যার। এই অস্থিরতার সূত্রপাত ঘটে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের মাধ্যমে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩০% চাকরির কোটা পুনর্বহাল করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এই কোটা সংস্কার করা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত জনসাধারণ, বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি করে, কারণ তারা মনে করেছিল যে কোটা পদ্ধতি মেধার ভিত্তিতে সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে। প্রথমে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুত দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। জনগণের মধ্যে সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতির অভিযোগ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা পরিবর্তনের পথের অভাব নিয়ে যে উদ্বেগ ছিল, তা এই আন্দোলন আরও বেগবান করে। আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় এবং সারাদেশে নিরাপত্তা বাহিনী, যেমন পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করে। এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগও ছিল এবং প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দলগুলোর সদস্যরা বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীদের হত্যা করার ঘটনায় জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে সেসময়। গ্রন্থে সেসব বিষয় তারিখ অনুযায়ী তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।”

এই সময় তিনি বলেন, ”বাংলাদেশের সতত স্বাভাবিক সহজাত আদর্শ ও জীবনবোধকে তারা নির্মূল করে দিতে চায়। তারা শত্রুকে মিত্র ও মিত্রকে শত্রু করার অপপ্রয়াস চালায়। তাই মানসিক, দৈহিক, নৈতিক পরিবর্তনের একটি অপরিহার্যতা অনুভূত হয়। মুক্তির আকাঙ্ক্ষা মানুষকে রক্তপাতকে উপেক্ষা করতে শেখায়। যে ছেলেটি বুক ও বাহু উদ্বেল করে আত্ম-উৎসর্গের মহিমা স্থাপন করেছে, তার অন্তর্গত শিক্ষা ও দীক্ষা কী ছিল অন্যত্র এবং সর্বত্র সেটিই বিপ্লবের বাংলার বর্ষা আন্দোলনের উৎস ভূমি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। একটি নতুন আদর্শ, একটি নতুন প্রেরণা এবং একটি নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা জনমানুষকে উদ্বেল করে তোলে। তাহলে বোঝা যায় মুক্তির লক্ষ্যে জীবনকে উৎসর্গ করার শপথ ছিল এসব শিক্ষার্থী। মুক্তি ও আদর্শের আলোয় উদ্ভাসিত ছিল তারা। আলোকিত মন থেকে নৈতিক বিপ্লব ঘটাতে পেরেছে তারা। আন্দোলন জুড়ে এই ছিল হৃদয়ের স্পন্দন।”

পাপিয়া সুলতানা পলাশী জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধিনে ইংরেজী সাহিত্যে বি.এ অনার্স এবং ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। 
বর্তমানে তিনি একটি সমবায় সমিতি’র সহ-সভাপতি হিসেবে কর্মরত আছেন। সেই সাথে একটি প্রতিবন্ধী সেবা সংস্থার দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে সম্মানের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর স্বপ্ন মানবসেবা করা বা মানবসেবামূলক কাজ আন্তরিকতা সাথে দায়িত্ব পালণ করে যাওয়া। লেখা-লেখি তার এক অন্যরকম নেশা, তাই তো ছোটবেলা থেকে সে নিয়মিত লেখা-লেখি চলছেন। 
ইতিমধ্যে তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ, ছোটগল্প লিখেছেন। তার লেখা দেশ-বিদেশের বহু সুনামধন্য পত্রিকা ও পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে।




 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ