তারাবি নামাজ বিশ রাকাত একটি দালিলিক বিশ্লেষণ
আপডেট সময় :
২০২৫-০৩-০২ ২৩:৫৪:৪০
তারাবি নামাজ বিশ রাকাত একটি দালিলিক বিশ্লেষণ
গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির
মাহে রমজানুল মোবারকের গুরুত্বপূর্ণ আমল তারাবি নামাজ। তারাবি নামাজের শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। হেলায় ফেলায় এ নামাজকে কাটছাঁট করা মোটেই সমাসীন নয়। তারাবি নামাজ অধিকাংশ আলেম ওলামা,পীর বুজুর্গদের মতে বিশ রাকাত,আট রাকাত নয়। যাদের নিকট নামায ভারী ও কষ্টকর, যারা নাফসের উপর বোঝা মনে করে তারাই 'তারাবি নামাজ"কে আট রাকাত বলে বা পড়ে। তাদের পক্ষে কিছুসংখ্যক
বর্ণনাকে বাহানা-অজুহাত সাব্যস্ত করে। এ জন্য বিশ রাকাত তারাবির পক্ষে অকাট্য প্রমাণাদি নিম্নে উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি বিশ রাকাত তারাবি পড়া-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা'য়ালা আনহুম ও আম মুসলমানদের সুন্নাত। (সুতরাং আট রাক'আত তারাবীহ সুন্নাতের পরিপন্থী।) দলীল নিম্নরূপ- হাদীস নম্বরা ১-৫। ইবনে আবী শায়বাহ ও তাবরানী 'কবীর' এ, বায়হাক্বী, আব্দুল ইবনে হুমায়দ এবং ইমাম বাগাভী সাইয়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন "নিশ্চয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পবিত্র রমজান মাসে বিশ রাক'আত পড়তেন- বিতর ব্যতীত। ইমাম বায়হাক্বী এতটুক লিখেছেন 'জামা'আত ব্যতীত বিশ রাক'আত তারাতীহ পড়তেন'।" এ হাদীস শরীফগুলো থেকে বুঝা গেলো যে, খোদ হুযুর-ই অল্ওয়ার সাল্লাল্লাহ তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিশ রাক'আত তারাভীহ পড়তেন। এও বুঝা গেলো যে, তারাতাহ 'সুন্নাতে মুআক্কাদাহ 'আলাল "আয়ন।' (অর্থাৎ শরীয়তের বিধানাবলী বর্তায় এমন প্রত্যেকের জন্যই তারাভীহর নামায সুন্নাতে মুআক্কাদাহ'। কারণ, হুযূর-ই আকরাম এ নামায সব সময় পড়েছেন এবং লোকজনকে উৎসাহও দিয়েছেন।
হাদীস নম্বর-৬ঃ ইমাম মালিক হযরত ইয়াযীদ ইবনে কমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর সূত্রে বর্ণনা করেছেন "হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনছর যামানায় রমজানে লোকেরা তেইশ রাক'আত নামায পড়তেন।" তারাভীহ বিশ রাকআত, বিতর তিন রাকআত।
হাদীস নম্বর-৭: ইমাম বায়হাক্বী মা'রিফায় সহীহ সনদে হযরত সা-ইব ইবনে ইয়ার্থীদের সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, "আমরা (সাহাবীগণ) হযরত ওমর ফারুকুের যামানায় (খিলাফতকালে) বিশ রাক'আত তারাভীহ ও
বিতর পড়তাম।" হাদীস নম্বর ৮: ইবনে মুনী' হযরত উবাই ইবনে কা'ব রাদ্বিয়াল্লাহ তা'আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, "তুমি লোকজনকে রমযানের রাতে তারাভীহর নামায় পড়াবে। কেননা লোকেরা দিনের বেলায় রোজা রাখে এবং কোরআন করীম উত্তমরূপে পড়তে পারে না। সুতরাং উত্তম হবে যদি তুমি তাদেরকে রাতে কোরআন পড়ে শুনাও।" হযরত উবাই আরয করলেন, "হে আমীরুল মু'মিনীন, এটা ওই কাজ, যা ইতোপূর্বে ছিলো না।" তিনি বললেন, "আমি জানি। কিন্তু এটা উত্তম কাজ।" সুতরাং হযরত উবাই তাঁদেরকে বিশ রাক'আত পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখার পর দেশের বিভিন্ন মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা তারাবী নামাজের জামাতে শামিল হন।
হাদীস নম্বর ৯: ইমাম বায়হাক্বী তাঁর 'সুনান' গ্রন্থে হযরত আবু আবদুর আবদুর রহমান সুলামী থেকে বর্ণনা করেছেন- হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু রমজান শরীফে কারীদেরকে ডাকলেন, তারপর একজনকে নির্দেশ দিলেন যেন পাঁচ তারাভীহ অর্থাৎ বিশ রাক'আত নামায পড়ান। হযরত আলী তাঁদেরকে বিতর পড়াতেন। হাদীস নম্বর -১০: ইমাম বায়হাক্বী হযরত আবুল হাসানা থেকে বর্ণনা করেন হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহ তা'আলা আনন্ত এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিলেন যেন তিনি পাঁচ তারাভীহ অর্থাৎ বিশ রাক'আত নামায পড়ান। নমুনাস্বরূপ কয়েকটা হাদীস এখানে পেশ করা হলো। অন্যথায় বিশ রাক'আতের পক্ষে হাদীস শরীফ অনেক রয়েছে। আগ্রহ থাকলে 'লুম'আতুল মাসাবীহ ফী রাক'আ-তিত তারাবীহ' এবং 'সহীছল বিহারী' ইত্যাদি পাঠ-পর্যালোচনা করতে পারেন। উম্মতের আলিমদের আমল। সবসময় প্রায়সব উম্মতের আমল বিশ রাক'আত তারাভীহ পড়াই চলে আসছে। এখনো বিশ্বের সর্বত্রই এ আমল বলবৎ রয়েছে। এ পর্যন্ত হেরমাঈন শরীফাঈন ও সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানগণ বিশ রাক'আত তারাভীহই পড়ে এসেছেন। তিরমিযী শরীফের রমজান মাসে 'রাত জাগরণ করে ইবাদত করার বিবরণ' শীর্ষক অধ্যায়ে এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-এবং অধিকাংশ আলিমের আমল এর উপরই, যা হযরত ওমর, হযরত আলী ও অন্যান্য সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহ তা'আলা আনন্বম থেকে বর্ণিত অর্থাৎ বিশ রাক'আত তারাভীহ।
আর এটাই হযরত সুফিয়ান সওরী, ইবনে মুবারক ও ইমাম শাফে'ঈ আলায়হিমুর রাহমাহর অভিমত। ইমাম শাফে'ঈ বলেছেন, "আমি মক্কাবাসীদেরকে বিশ রাক'আত তারাভীহ পড়তে দেখতে পেয়েছি।" 'ওমদাতুল ক্বারী শরহে বোখারী'। ৫ম খন্ড: ৩৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে- "ইবনে আবদুল বার বলেন, বিশ রাক'আত তারাভীহই প্রায় সব বিজ্ঞ আলিমের কথা। ইমাম শাফে'ঈ এবং অধিকাংশ আলিম ও ফত্ত্বীহগণের অভিমত। বস্তুত এটাই বিশুদ্ধ কথা। এটা হযরত উবাই ইবনে কা'ব রাদ্বিয়াল্লাহু 'তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। এ'তে সাহাবীগণের কোন বিরোধ নেই। মাওলানা আলী কারী 'শরহে নিকুয়য়াহ'য় বিশ রাক'আত তারাভীহ সম্পর্কে বলেন- বিশ রাক'আত তারাষ্ট্রীহর উপর মুসলমানদের ইজমা' (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেননা, ইমাম বায়হাক্বী সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, সাহাবা-ই কেরাম ও সমস্ত মুসলমান হযরত ওমর, হযরত ওসমান ও হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমের যমানায় বিশ রাক'আত তারাভীহ পড়তেন। আল্লামা ইবনে হাজর হায়তামী বলেছেন। সমস্ত সাহাবী এ কথার উপর একমত যে, তারাভীহ বিশ রাক'আত।
উপরিউক্ত বরাতগুলো থেকে বুঝা গেলো যে, বিশ রাক'আত তারাভীহ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত। বিশ রাক'আত তারাভীহর উপর সাহাবা-ই কেরামের ইজমা' হয়েছে। বিশ রাক'আত তারাভীহ পড়া আম মুসলমানদের আমল। বিশ রাক'আত তারাভীহ হারামাঈন শরীফাঙ্গনে পড়া হতো। বিশ রাক'আত তারাভীহ বিবেক ও যুক্তির অনুরূপ। বিশ রাক'আত তারাভীহ কোরআনের রুকু'গুলোর সংখ্যানুরূপ। জানিনা, যারা আট রাক'আত তারাভীহ পড়ে তারা কার অনুসরণ করে? আট রাক'আত কিংবা দশ রাক
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স