মোশারফ হোসেন লিটন সুনামগঞ্জ ঃ
হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময় সীমা ১৫ই ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসাবেই আর ৫দিন বাকী। বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ শেষ করার কোনো লক্ষ্যন নেই। এখনও চলছে মাটির কাজ, এছাড়াও বেশি ভাগ বাঁধে কোনো সাইনবোর্ড নেই। বরং নানান অজুহাতে কাজের বিলম্বের কথা বলছেন দায়িত্বশীলগন বলে অভিযোগ তুলছেন কৃষক ও হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠন গুলো।
হাওর পাড়ের স্থানীয় কৃষকেরা জানান,মাটির কাজই শেষ হতে আরও ১৫ দিন লাগতে পারে।
কাজে দেরিতে আমাদের চিন্তা বাড়ে। আর প্রতি বছরের মত এবারও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার আগাম পাহাড়ী ঢলের পানিতে কষ্টে ফলানো বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শংকায় উৎবেগ আর উৎকন্ঠা বিরাজ করছে কৃষকদের মধ্যে পাশাপাশি ক্ষোভও বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বেশির ভাগ কাজ শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। অনেক বাঁধের নিচে মাটির বদলে দেওয়া হয়েছে বালু। তবে কৃষকরা চাইছে কাজ তাড়াড়াড়ি হোক। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে এবার ১২টি উপজেলার ৫৩টি হাওরে ৬৮৬ প্রকল্পে বাঁধের কাজ হচ্ছে। এ জন্য প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ১২৭ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৮৭ কোটি টাকা। একটি প্রকল্পে স্থানীয় ভাবে গঠিত একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)কাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় এবার ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। জেলার এবার ১২টি উপজেলার ৫৩টি হাওরে ৬৮৬ প্রকল্পে বাঁধের কাজ হচ্ছে। জেলায় এবার ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
পাউবোর অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে কম কাজ হয়েছে তাহিরপুর উপজেলায়। এই উপজেলায় ৭৬টি প্রকল্পে ১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজের অগ্রগতি ৭৫ ভাগ। এ উপজেলার আড়াই কোটি টাকা বোরো ধান উৎপাদন হয়।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো)দাবি গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কাজের অগগ্রতি ৮৫ শতাংশ জানালেও এই দাবির সঙ্গে এক মত নন হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। তিনি ক্ষোভের সাথে জানিয়েছেন,প্রতি বছরেই পাউবোর হিসাবের সঙ্গে বাঁধের কাজের বাস্তবতার কোনো মিল পাওয়া যায় না। বাস্তবে মাঠের অবস্থা ভাল নয়। কাজে শুরু থেকেই গাফিলতি ছিল এখনও আছে। এবারও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হয় তাহলে ফসল ঝুঁকিতে পড়বে এর দায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে নিতে হবে।
জেলার তাহিরপুর উপজেলার সদরের থানার সামনে মাটিয়ান হাওর,টাংগুয়ার হাওরসহ কয়েকটি প্রকল্পের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের খোঁজ নিয়ে বাঁধের অবস্থা ভাল নয় তার মিল পাওয়া গেছে। কাজ শুরুই হয়েছে নির্ধারিত সময়ে এক মাসের পরে। এর মধ্যে কিছু কিছু প্রকল্পে মাটি ফেলে কাজ বন্ধ করে রাখাও হয়েছে। আবার কোন কোন প্রকল্পে কাজ শুরু হয়েছে মাত্র তিন থেকে চার দিন আগে।
তাহিরপুর উপজেলার সদরের থানার সামনে মাটিয়ান হাওর রক্ষায় ৪১নং পিআইসি বৌলাই নদী ঘেঁষে বিশাল অংশে এখনো এক উড়া মাটি ফেলা হয়নি। নেই সাইনবোর্ড। এই পিআসির সভাপতি তাজু মিয়া। এছাড়াও তাহিরপুর উপজেলার ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪ নং পিআইসির কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। এভাবে অন্যান্য হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজও ধীর গতিতে চলছে।
তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের ফসল রক্ষায় পূর্ব পাড়ে কেন্দুয়া নদীর তীর ঘেঁষে গাজীপুর গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে ৬৮ নম্বর প্রকল্প। এই প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান মিয়া বলেন,এক দিকে মাটি পাওয়া যায় না অন্য দিকে বিলও দিছে মাত্র এক কিস্তি। আবার মেশিন(এক্সকাভেটর)দিয়ে কাজ করাব সেটিও অন্য জায়গায় কাজ করতেছে। এই বাঁধের কাজ এক সপ্তার মধ্যেই কাজ শেষ করমু।
মাটিয়ান ও টাংগুয়ার হাওর পাড়ের কৃষকগন উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছেন হাওরে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরুতে দায়সারা লোক দেখানো কাজ আর শেষে দিকে তাড়াহুড়া করে কাজ চলছে এতে কাজের নামে টাকা লুটপাটের মহোৎসব দেখা গেছে। যে কাজ হচ্ছে এই কাজে কৃষকের কোনো উপকার হবে না। সামান্য পানির ধাক্ষায় বাঁধ ভেঙে যাবে। তবে বাঁধ সংশ্লিষ্টদের পকেট ভরেছে।
তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন জানান,পিআইসি গঠনে নানা কারণে বিলম্ব হয়েছে। আবার মাটিও পাওয়া যায় না। এসব কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন কাজে গতি বেড়েছে আশা করছি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মাটির কাজ শেষ হয়ে যাবে।।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা হাওরে বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন,নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব প্রকল্পে মাটি কাজ অন্তত শেষ করার জন্য চেষ্টা করছি।