বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
বিঘাই (Bighai) নদী, যা বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি প্রায় ৬ মাইল দীর্ঘ একটি ছোট নদী। যদিও এটি বহুল পরিচিত নয়, তবে এটি স্থানীয় জনগণের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রায় ৩০০০ মানুষ এই নদীকে ঘিরে বসবাস করছে।
এই নদী তীরের ভাঙন এখানে বসবাসকারী মানুষের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ভাঙনের ফলে বহু মানুষ ভিটেমাটি ও জীবিকা হারাচ্ছে।
বসতবাড়ি ও কৃষিজমির ক্ষতি করছে,পরিবারগুলোকে বাস্তুচ্যুত করছে, জীবিকার ক্ষতির ফলে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করছে। দুঃখজনকভাবে, তারা স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে কোনো যথাযথ সহায়তা পাচ্ছে না, যার ফলে তাদের দুর্ভোগ ক্রমশ বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে স্থানীয় বাসিন্দারা উপেক্ষা ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। তাঁদের দুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু আজও এই সমস্যার সমাধানে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয়রা এই সংকট মোকাবিলায় শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রস্তাবনা রেখেছেন। যেমন,
• সরকারি হস্তক্ষেপ করে নদী ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া।
• প্রতিকারমূলক উদ্যোগ নিয়ে বাস্তুচ্যুত পরিবারদের সহায়তা প্রদান।
• এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে বের করা।
কিছু এনজিও সহায়তা প্রদান করলেও অনেক সময় তাদের সহায়তার পেছনে লুকিয়ে থাকে স্বার্থান্বেষী উদ্দেশ্য। যেমন: এনজিওগুলো নিজেদের প্রচারের জন্য ত্রাণ সহায়তাকে ব্যবহার করে। তারা উচ্চ সুদের হার আরোপ করে, যা উপকারভোগীদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত, সরকারের মাধ্যমে ত্রাণ পুনরুদ্ধার করা হয়, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আরও অসহায় হয়ে পড়ে।
জানা যায় যে, এই দুর্যোগের অন্যতম শিকার হলেন আব্দুল্লাহ। তিনি একজন স্থানীয় কৃষক, যিনি বিঘাই নদীর ভাঙনের কারণে ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে প্রায় দুই একর জমি নদীগর্ভে হারিয়েছেন।সবমিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে। তার জীবিকা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং তার কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তার একমাত্র সম্পত্তি এখন তার ঘর, যা নদীর কিনারায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদীভাঙন এভাবে অব্যাহত থাকলে, আব্দুল্লাহর দুর্ভোগ দিন দিন আরও বাড়বে। সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ না হলে, তিনি এবং তার মতো আরও অনেকে সবকিছু হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
বিঘাই নদীর তীরবর্তী মানুষরা শুধু নদীভাঙনের শিকারই নন, বরং তারা মারাত্মক বন্যা ও পানিবাহিত রোগের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে, কারণ দূষিত পানি ও স্যানিটেশনের অভাব তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহিম জানান, বর্ষাকালে তার বাড়ি প্রায় ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত প্লাবিত হয়, যার ফলে তাদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি, নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন—কলেরা ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, কারণ বন্যার পানিতে দূষণ ছড়িয়ে পড়ে। পরিষ্কার পানির অভাব, যা তাদের অপরিষ্কার ও দূষিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য করছে।
জীবন বাঁচাতে স্থানীয়রা পানি ফুটিয়ে পান করার চেষ্টা করেন, তবে এটি শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হয় যখন তারা দূরবর্তী কোনও পরিষ্কার পানির উৎস পান। এই সমস্যা শুধু আব্দুর রহিমের নয়— বিঘাই নদীর আশপাশের প্রায় সব বাসিন্দা একই সমস্যায় ভুগছেন এবং প্রতিদিন সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য সংগ্রাম করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন জানাচ্ছেন— পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো যায়। বন্যা প্রতিরোধ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে, যাতে জলাবদ্ধতা কমে। চিকিৎসা সহায়তা ও রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি চালু করতে হবে, যাতে মানুষ পানিবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা পান। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে বিঘাই নদীর বাসিন্দারা আরও বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন এবং অনিরাপদ পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য হবেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে মানুষের মৌলিক চাহিদা— সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়।
এই বিপর্যয় রোধ করতে সরকারকে অবশ্যই: বাধাবিহীন সরাসরি সহায়তা প্রদান করতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য। নদী ভাঙন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে মানুষের জমি ও ঘর রক্ষা করা যায়। এনজিও বা অন্যান্য সংস্থার শোষণ বন্ধ করতে হবে এবং স্বচ্ছ ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে। যদি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে কৃষক আব্দুল্লাহর মতো অগণিত মানুষ দুর্দশার শিকার হবেন। বিঘাই নদীর ভাঙন সমস্যা অবিলম্বে সমাধানের জন্য সরকারের জরুরি মনোযোগ প্রয়োজন যাতে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলো রক্ষা পায়।
এই ভাঙনের ক্ষেত্রে যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। বিঘাই নদীর এই ভয়ঙ্কর ভাঙন সমস্যা মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। যাতে বাকেরগঞ্জ-উপজেলা অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা যায়।