নিরব চাঁদাবাজীতে সরব আলফাডাঙ্গা বিএনপি খসরুর কথাই যেন আইন
নিরব চাঁদাবাজীতে সরব আলফাডাঙ্গা বিএনপি খসরুর কথাই যেন আইন
বিশেষ প্রতিবেদক
গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশ (নাসির গ্রুপ) নিরব চাঁদাবাজীতে সরব হয়ে উঠেছে।
মামলার পর মামলার খসড়া সাঁজিয়ে অনলাইনে ছড়িয়ে দিয়ে নামধারী আসামীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব (স্থগিত) নুরজামাল খসরুর বিরুদ্ধে।
বিএনপির (স্থগিত) আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব নুর জামাল খসরু'র বিরুদ্ধে চাঁদবাজী,মামলা বানিজ্য,সালিস বানিজ্য, মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, জমি দখল,বালু মহল দখল,বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার গডফাদার বনে গেছেন এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। খসরুর সন্ত্রাসী ও অপ্রতিরোধ্য আচরনে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেননা তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, জন প্রতি ২০-৩০ হাজার টাকা বা ক্ষেত্র বিশেষ ৫০ হাজার ১ লাখে সমঝোতা করতে হয়েছে খসরুর সাথে।
আরো বেশ কিছু সুত্রমতে জানা গেছে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন আঃ লীগের নেত্রীবৃন্দের সাথে গা ঘঁষে চলতেন খসরু। পকেট খরচ থেকে শুরু করে ছেলেময়ের লেখা পড়া খরচও নিতেন আঃলীগের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে। ৫ আগষ্ট পরবর্তী ভোল পাল্টে ফেলেন, থানার স্বীকৃত দালাল খসরু। মামলার পর মামলা দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েও নিচ্ছেন বিএনপি নামধারী এই দালাল। তার সাথে অত্যন্ত সুকৌশলে এই নিরব চাঁদাবাজীতে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন পৌর বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক রেজাউল।
গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় দখল দারিত্ব নিতে মরিয়া হয়ে উঠে এই খসরু। জানা যায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে বহিরাগত চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত লোকজন নিয়ে মহড়া দিয়ে মানুষের মনে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করতে থাকে তার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। তাদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ বাদ যাচ্ছেন না দিনমজুর থেকে শুরু করে কৃষক শ্রমিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে. থানার অফিসার ইনচার্জ হারুন অর রশীদ ও কযেকজন অসাধু এস আই ফরহাদ (বদলী), মিলে আঃ লীগের নেতা কর্মীদের হয়রানী ও মিথ্যা মামলার জালে ফাঁসাচ্ছেন। থানা পুলিশ ও বিএনপির নেতাদের সোর্স হিসেবে কাজ করছেন খোলাবাড়িয়ার দালাল সজিব, ছাতিয়ার গাতির বিপুল ও পাড়াগ্রাম ওয়ার্ডের মেম্বার ইব্রাহীম ওরফে সফদার। সফদার জামাতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন, পরবর্তী আঃলীগ সরকারের আমলে হয়ে যান কৃষকলীগের ইউনিয়ন সেক্রেটারী। এখন রীতিমত খোসরুর ফুটফরমায়েস ও সোর্স হিসেবে নিরবে কাজ করছেন। ভোল পাল্টিয়ে রাতারাতি মিশে যাওয়ায় ওস্তাত এই ধুরন্ধর সফদার মেম্বার। অভিযোগ রয়েছে, সফদার ২০২৩ সালে নিজ গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে অনৈতিক কাজে হাতে নাতে ধরা পড়লেও এই খসরু আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে বাঁচিয়ে দেন।
থানা সুত্রে জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারী আলফাডাঙ্গা বোয়ালমারী মধুখালী সালথা নড়রকান্দার ১৭০ জন আঃলীগ বিএনপি ও সাংবাদিকদের নামে মামলা করে বুড়াইচ গ্রামের মাদকাসক্ত ভ্যানচালক লাভলু সরদার।
নুরুজ্জামান খসরুর পর্দার পেছনে থেকে যাবতীয় কলকাঠি নেড়ে মামলা রেকর্ড করান বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
মামলার বাদী লাভলুর সাথে কথা বলে জানা যায়, সে অনেক আসামীকে চেনেই না। এক প্রকার বল প্রয়োগ ও আর্থিক সুবিধা দেয়ার কথা বলে লাভলু কে দিয়ে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র মুলক মামলা করান নুরজ্জামান খসরু। এ ছাড়াও নিজের আপন চাচাকে হত্যা ও বোয়ালমারীর এক মাদ্রাসা ছাত্রকে হত্যার দায়ে জেল খেটেছেন এই বিএনপি নেতা। এমন কোন অপরাধ নেই যেখানে খসরুর সুনিপুন হাতের ছোয়া নেই।
সম্প্রতী ফরিদপুর ১ আসনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী শামসুদ্দীন ঝনু স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগে উলেখ করা হয়েছে, কৃষক দলের সহ সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামসহ তার গ্রুপের লোকজন এলাকায় চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ আঃলীগের নেতা কর্মীদের সাথে আঁতাতের অভিযোগ আনেন অভিযোগকারীরা। বালু মহল নিয়ন্ত্রন, বিভিন্ন রকমের চাঁদাবাজী, মামলা বানিজ্য, সরকারী দপ্তর সমূহে প্রভাব বিস্তার, শালিস বানিজ্যের কারনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে বিএনপির বড় একটা অংশ। অবিলম্বে খন্দকার নাসিরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানান তারা।
উল্লেখ্য, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম নাসিরের একান্ত অনুগত ও দীর্ঘ ১৭ বছর না খেতে পারা এই চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী অপ্রতিরোধ্য ও দিগ্বিদিক হয়ে পড়েছেন বলে জানান উপজেলার একাধিক বিএনপির ত্যাগী নেতা। এ নিয়ে উপজেলা বিএনপির মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। সম্প্রতী আওয়ামী লীগের নামে দায়ের করা বিস্ফোরন দ্রব্য নিয়ন্ত্রন মামলা নিয়েও খসরুর সাথে মতবিরোধ তৈরী হয়েছে আব্দুল মান্নান আব্বাস ও মনিরিজ্জামান মনিরের মধ্যে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোসবুর রহমান খোকন প্রতিবেদকে বলেন, এই খসরু, খন্দকার নাসিরের মদদে আলফাডাঙ্গা উপজেলাটা কে অতিষ্ঠ করে তুলছে সে বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে চাদাবাজী, থানার দালালী, মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে এমন কোন অবৈধ কর্মকাণ্ড নাই যে সে তা করছে না। তার এমন কর্মকান্ডে আমরা বিব্রত ও বিরক্ত। তার থেকে রেহাই পাচ্ছে না দলের কর্মীরাও। তার এমন কর্মকান্ডের প্রতিবাদে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে দলের সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহল কবির রিজভী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। জেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ কে বার বার অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু দলের হাই কমান্ড কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। এভাবে চলতে থাকলে এ জনপদে ভোটের রাজনীতিতে বি এন পির উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। নুরজামাল খসরু তার ব্যাক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষে আঃলীগের পদধারী নেতাদের রেখে নিরীহ নিরপরাধ লোকেদের নামে মামলা দায়ের করেছে। যা অত্যন্ত জঘন্য ও নিন্দনীয়।
উপজেলা বিএনপি সহযোগী সংগঠনের বৃহৎ অংশ ও এলাকাবাসী নুর জামাল খসরুর যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তারা দ্রুত খসরুর বিরুদ্ধে দলের সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করে, আইনের আওতায় আনার জোর দাবীও জানান।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স