চট্টগ্রামে কুতুবদিয়ার সন্তান নতুন সিইসি এম নাছির উদ্দীন
চট্টগ্রামে কুতুবদিয়ার সন্তান নতুন সিইসি এম নাছির উদ্দীন
এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে কুতুবদিয়া কৃতি সন্তান দেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) মানে যেন অনাস্থার আঁধার ঘর। এ পর্যন্ত গঠিত ১২ টি নির্বাচন কমিশনের মধ্যে সব কটিই কম বেশি আলোচিত সমালোচিত বিতর্কিত। বিশেষ করে গত ১৫ বছরের সবক’টা জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে অবিশ্বাস, সন্দেহ তৈরী হয়েছে তার জন্য ওই সময়কালের নির্বাচন কমিশনগুলোকে দায়ী করা হয়। নির্বাচন কমিশনের প্রায় একই রকম ভূমিকা দেখে জনমনে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ইসি মানেই সরকারের ইচ্ছায়, সরকারের দ্বারা এবং ক্ষমতাসীন সরকারকেই পুনরায় ক্ষমতায় ফেরানোর এক তাবেদারি প্রতিষ্ঠান। স্বাধীন কমিশন হয়ে ও ইসির দলীয় প্রতিষ্ঠানের মত কর্মকাণ্ডে হাঁফিয়ে ওঠা জনগণ আমূল পাল্টে দেয়ার মত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পেল নতুন একটি ইসি। কুতুবদিয়ার সন্তান অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে আজ নতুন এ কমিশন গঠিত হয়। দায়িত্বে পেয়ে নতুন সিইসি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা করবো, ইনশাআল্লাহ্। এ দায়িত্ব যখন এসেছে, আমাদের সুষ্ঠুভাবে তা পালন করতে হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
আমি সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করব, এটাই অঙ্গিকার। আগামী সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচনে বিশ্বাসী। এটাই আমার মিশন। এটাই আমার ভিশন। এটাই আমার দায়িত্ব এবং এটাই আমার কমিটমেন্ট টু দ্যা নেশন। জনগণ ও আশান্বিত হতে চায় নতুন পরিস্থিতিতে, দেখতে চায় কুতুবদিয়ার এ কৃতী সন্তানের হাতেই ইসি হয়ে উঠবে হতাশার সাগরে ‘কুতুবদিয়ার বাতিঘর। কে এই নতুন সিইসি - সিইসি নাসির উদ্দীনের জন্ম কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষে ১৯৭৭ সালে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এর দুই বছর পর বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরিতে যুক্ত হন তিনি। কর্মজীবনে তিনি তথ্য সচিব, জ্বালানি সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান তিনি।
নির্বাচন কমিশন, বিতর্ক যার নিত্য সহচর : স্বাধীনতার ৫ দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতির সঙ্গে ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দেশের অপরাপর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কমবেশি এগিয়ে গেলেও বরাবরই পিছিয়ে পড়েছে ইসি। গণতন্ত্র রক্ষার অন্যতম অনুঘটক ও সাংবিধানিক সংস্থাটি বলতে গেলে কখনোই বিতর্ক এড়াতে পারেনি। দেশের ইতিহাসে যে ১২টি নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করেছে তার ২/১ ব্যতিক্রম ছাড়া সকলেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে বলতে গেলে ব্যর্থ। নির্বাচন ইস্যুতে বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে কমিশন।
স্বাধীন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত দেশে ১২টি নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। ১৯৭২ সালের ৮ জুলাই দেশের প্রথম নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক এ সংস্থার যাত্রা শুরু। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত গঠিত ১২টি কমিশনের মধ্যে ওয়ান ইলেভেনের সময় নিযুক্ত ড. এটিএম শামসুল হুদা এবং ১৯৯৬ সালে নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ আবু হেনা কমিশন ছাড়া সকলকেই বিতর্কের মধ্যে চলতে হয়েছে। অবশ্য এ দুটি কমিশনও একেবারে বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। মজার ব্যাপার হলো ক্ষমতাসীন সব সরকারই নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা করে এসেছে। বিপরীতে বিরোধীপক্ষ আগাগোড়াই সমালোচনায় মুখর ছিল ইসির। দেশের কমিশনগুলোর কার্যকাল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ১২টি নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ৩ টিকে বিদায় নিতে হয় বেশ দুঃখজনকভাবে। এদের কেউ ৫ বছরের মেয়াদের ২ বছর ও পার করতে পারেনি।
এগুলো হলো- বিচারপতি সুলতান হোসেন খান কমিশন (এক বছর), বিচারপতি একেএম সাদেক কমিশন (এক বছর) এবং বিচারপতি এমএ আজিজ কমিশন (দেড় বছর)। এদের মধ্যে একেএম সাদেকের অধীনে বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারির (১৯৯৬) সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অন্য দুটি কমিশনের অধীনে কোনও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আজিজ কমিশন ৯ম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলে ও ওই নির্বাচন বাতিল হয় এবং তাকে পদত্যাগ করতে হয়। বিচারপতি মো. ইদ্রিস, বিচারপতি চৌধুরী এ.টি.এম মাসুদ, এম এ সাঈদ, ড. এটিএম শামসুল হুদা, কাজী রাকিব উদ্দীন আহমেদ তাদের ৫ বছরের পূর্ণ মেয়াদ দায়িত্ব পালন করেছেন। নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় বিচারপতি মো. আব্দুর রউফ ও মোহাম্মদ আবু হেনা কমিশন তাদের মেয়াদ শেষ না করে বিদায় দেন। বিচারপতি মাসুদ কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হয় দুটি সংসদ নির্বাচন। তার সময় ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ এবং ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া অন্যসব কমিশনের অধীনে একটি করে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিচারপতি এ কে, এম নুরুল ইসলাম কমিশন দায়িত্ব পালন করেন প্রায় আট বছর। দেশের ইতিহাসে ১১টি সংসদ নির্বাচন ছাড়াও সরাসরি ভোটে তিনটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ.কে.এম নুরুল ইসলামের অধীনে ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি হন।
এ ছাড়া ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। নির্বাচনটিও অনুষ্ঠিত হয় নুরুল ইসলাম কমিশনের অধীনে। সর্বশেষ সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর। যেখানে এইচএম এরশাদ নির্বাচিত হন। নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় মাসুদ কমিশনের অধীনে। দেশের নির্বাচন কমিশন গুলোর মধ্যে সবগুলো নিয়ে কমবেশি বিতর্ক থাকলে ও সবাইকে ছাপিয়ে গেছে বর্তমান কে এম নূরুল হুদা কমিশন। সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এই কমিশন তাদের মেয়াদের চার বছরে কখনোই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম হুদা ও কমিশনার মাহবু্ব তালুকদার প্রকাশ্য সভায় একে অপরের কঠোর সমালোচনা করেছেন। কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমকে ডেকে তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সমালোচনা করেছেন। বিতর্কের দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও পূর্ববর্তী কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ কমিশনের থেকে একটি দিক থেকে এগিয়ে হুদা কমিশন। আর তা হচ্ছে অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন। সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পাওয়া রকিব কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের মিত্রসহ বেশিরভাগ দল নির্বাচন বর্জন করে। ওই নির্বাচনে ১৫২ জন সংসদ সদস্য বিনাভোটে জয়ী হয়েছিলেন। এছাড়া সর্বশেষ হাবিবুল আওয়াল কমিশনও গিয়েছে নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে।
হাবিবুল আউয়ালের বিতর্কিত যত মন্তব্য : গত ৫ সেপ্টেম্বর দুপুর পদত্যাগ করেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তার অধীনেই ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। তিনি ওই নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ব্যক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, দলের সঙ্গে নয়। এর আগে ২০২৩ সালে ১ অক্টোবর তিনি বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক ও সমালোচনা হতে পারে। অতীতেও হয়েছে। ৫০, ৬০, ৭০ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলেও বিতর্ক পাওয়া যাবে। এমনকি ব্রিটিশ আমলের নির্বাচন নিয়েও কিছু কিছু বিতর্ক হয়েছে। তখন হয়তো মাত্রাটা কম ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে নির্বাচনটি করতে যাচ্ছি, সেটার একটা বিশেষ দিক হচ্ছে, অভিযোগ বা বিতর্কের মাত্রাটা একটু অতিরিক্ত। ২০১৪ ও ২০১৮ এর চাপটা এসে আমাদের ওপর পড়েছে, এই নির্বাচন কমিশনের ওপর পড়েছে। আমরাও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি মানুষের য। এগুলো সত্য হতে পারে, অসত্য হতে পারে, মিথ্যা হতে পারে, সত্য হতে পারে। আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। ৩ দিন পর ৪ অক্টোবর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে কে নির্বাচনে এল, কে এল না, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। ব্যাপকসংখ্যক ভোটার ভোট দিলেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে বলে তিনি মমন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ইসি নির্বাচনের লিগ্যালিটি (আইনগত দিক) দেখবে, নির্বাচনের লেজিটিমেসি (বৈধতা/ন্যায্যতা) নিয়ে মাথা ঘামাবে না।
সিইসি বলেন, যদি এক শতাংশ ভোট পড়ে এবং ৯৯ শতাংশ নাও পড়ে, আইনগতভাবে নির্বাচন সঠিক হবে। লেজিটিমেসির ব্যাপারটা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু আইনত নির্বাচন সঠিক হবে। লেজিটেমেসি নিয়ে ইসি মাথা ঘামাবে না। ইসি দেখবে, ভোটটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে - এক শতাংশও যদি ভোট পড়ে এবং ভোটার যারা আসছে, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি, তাদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে, তারা নির্বিঘ্ন ও স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
২০২৪ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলা জট প্রসঙ্গে সিইসি বলেছেন, এত মামলা কেন ঝুলে আছে, তা নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। এই মামলাজটের কারণে কিছু লোকের লাভ হয়, তাই মামলাজট কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে কেউ এগিয়ে আসে না। সরকার পতনের পর ১৯ দিন চুপ থাকলেও ২৫ আগস্ট সংবাদপত্রে কলাম লিখে হাবিবুল আউয়াল ‘বিপ্লবের উদ্দেশ্যসমূহকে এগিয়ে নিতে’ অসামরিক ফরমান জারি করে সংবিধান পুরোপুরি অথবা আংশিক স্থগিত করার আহ্বান জানান। ২০২৪ সালে ২১ মে উপজেলায় প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সিইসি বলেছিলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ৩০ শতাংশ ভোটকে কখনোই খুব উৎসাহব্যঞ্জক মনে করেন না। ভোটের হার কম হওয়ার একটা প্রধান কারণ হতে পারে, দেশের একটা বড় রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছে এবং জনগণকে ভোট প্রদানেও নিরুৎসাহিত করেছে। যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ ধরনের চেষ্টা হতে পারে। পক্ষ বিপক্ষ থাকতে পারে।
তিনি ওই সময় বলেছিলেন, আমাদের ভোট নিয়ে কোনো সংকট নেই। সংকটটি হচ্ছে রাজনীতিতে। আমি মনে করি, রাজনীতি যদি আরও সুস্থ ধারায় প্রবাহিত হয়, ভবিষ্যতে হয়তো ভোটার স্বল্পতার যে সমস্যাটুকু এগুলো কাটিয়ে উঠবে। ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা না থাকলে নির্বাচন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফল হবে না। তাদের সহযোগিতা পেলে নির্বাচনটা আরও বেশি সফল হবে। জাতীয় নির্বাচনের পর ২০২৪ সালে ১৮ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুসম্পন্ন হয়েছে।
২০২২ সালে ৭ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হবে না। ইভিএম নিয়ে কোনো সংকট দেখছি না। রাজনৈতিক অঙ্গনে যে সংকট দেখছি তা ইভিএম নিয়ে নয়, আরও মোটাদাগে সংকট। আমরা আশাকরি এই সংকট কেটে যাবে। যদি ফয়সালা হয় সব ভোট ব্যালটে হবে। রাজনৈতিকভাবে শতভাগ সমঝোতা যদি হয় অসুবিধা নেই। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
২০২৩ সালে ২৭ নভেম্বর দেশের গণতন্ত্রে মাঝে মাঝে ধাক্কা আসে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভাবতে হবে। বিলেতের গণতন্ত্র ৩শ’ থেকে ৪শ’ বছরের। বিলেতের ইতিহাস হয়তো দেড় হাজার থেকে দুই হাজার বছরের কিন্তু তাদের গণতন্ত্র টিকে আছে অন্তত ৩০০ বছর ধরে। আমাদের গণতন্ত্র কিন্তু নতুন। মাঝে মাঝে ধাক্কা আসে। সামরিক শাসন, গণঅভ্যুত্থান ইত্যাদি হয়ে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় এখনও স্থিরভাবে আমরা ৫০ বছর এগুতে পারিনি। পদত্যাগের আগে যা বললেন হাবিবুল আউয়াল : ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করার আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের নানা তথ্য তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলছেন, ‘মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন’।
সংবাদ সম্মেলনে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান আগামীতে আমাদের দেশকে প্রবল সংস্কারের দিকে এগিয়ে নিয়ে আরও সুন্দর একটি বাংলাদেশ সৃষ্টির যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, আমরা সবাই আশাবাদী, সেই স্বপ্ন অচিরেই বাস্তবায়িত হবে। আগামী দিনের বাংলাদেশে প্রশাসন, বিচার, নির্বাচন সব কিছু অনেক সুন্দর হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের প্রথম সাংবিধানিক নির্বাচন ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচন নিয়েও ছিল অনেক বিতর্ক। ১৯৭৯ ও ১৯৮৭ সালের সাধারণ নির্বাচন সামরিক শাসন আমলে হয়েছে, ফলাফল নিয়ে ছিল বিতর্ক। ১৯৯১ এর নির্বাচন সম্মত রাজনৈতিক রূপরেখার ভিত্তিতে হয়েছে। একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের হয়েছিল।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন সাংবিধানিক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সূক্ষ্ম বা স্থূল কারচুপির সীমিত সমালোচনা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হয়েছিল।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন সেনা সমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৭টি ও আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছিল। নির্বাচন বিতর্কে ঊর্ধ্বে ছিল না। নিরাপদ প্রস্থান (সেফ এক্সিট) বিষয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সেনা সমর্থিত অসামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দর কষাকষির বিষয়টি প্রকাশ্য ছিল। সেই প্রশ্নে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থানও গোপন ছিল না। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন সংবিধান মতে দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে।
সাবেক ৩ সিইসিকে আইনের আওতায় আনার ইঙ্গিত : সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) আইনের আওতায় আনার ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সাবেক এই তিন সিইসির আমলে করা বিতর্কিত নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইতে পারে সংস্কার কমিশন। গত তিন নির্বাচনের অপরাধগুলো যেন সাবেক তিন সিইসির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, সেই সুপারিশ করার কথাও চিন্তা-ভাবনা করছে সংস্কার কমিশন। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) গণমাধ্যম সম্পাদককে সঙ্গে বৈঠক শেষে এমন পরিকল্পনার কথা জানান নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান গত ৩ কমিশনকে সংস্কার কমিশন ডাকবে কিনা, তাদের সময় যে অনিয়ম তা শুনবেন কিনা। জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সাবেক তিন কমিশন নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা আবার পর্যালোচনা করছি। নির্বাচনী অপরাধগুলো তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে।
নতুন কমিশনের কাছে জনগণের প্রত্যাশা : সর্বশেষ যে কমিশন গঠিত হয়েছে তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। কারণ মানুষ দীর্ঘদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ভোট দিতে না পারার প্রবল ক্ষোভও ছিল এ কথা অনস্বীকার্য। ফলে এই কমিশনের উপর সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের গণচাপও থাকবে বেশি। সব চাপ- তাপ ছাপিয়ে নতুন কমিশন সৃষ্ট অনুকূল পরিবেশে একটি সুস্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স