বালুর টাকা নেতাদের পকেটে, প্রশাসনের চোখ বন্ধ, ভিটেমাটি হারিয়ে কাঁদছে গরীব মানুষ।

আপলোড সময় : ১২-০৮-২০২৫ ১০:৩২:১৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১২-০৮-২০২৫ ১০:৩২:১৩ অপরাহ্ন

মো: নাহিদুর রহমান শামীম, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি। 

শত শত বার নিউজ করে থামনো যাচ্ছে না মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর, ঘিওর, হরিরামপুর, ও শিবালয় উপজেলার মাঝে বহে যাওয়া পন্দ্রা ও যমুনার বুকে ডেজার মেশিনের ভয়ংকর থাবা। দিন রাত ডেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাটছে বিএনপি নেতা কর্মীরা, মাটি ইজারা দেওয়ার পরেও, এমন কি সিমানা নির্ধারন করে দেওয়ার পরেও তাদের চাহিদা যেন অধিক পরিমাণে বেড়েছে।

গত দুই সপ্তাহে দৌলতপুর, ঘিওর, হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলার নদী পারের ফসলি জমি, মাছের ঘের, বসত ভিটামাটি, সব নদি গর্ভে বিলিন হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে না ভয়ংকর ডেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাঁটার ফলে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পদ্মার চর এখন অসহায় মানুষের হাহাকার আর ভূমি দস্যুর দাপটের মিশ্র চিত্র। পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে শতাধিক পরিবার আজ ভূমিহীন। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তাদের স্বপ্নের বাড়িঘর, জমি আর জীবিকা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লেসরাগঞ্জ ইউনিয়নের নটাখোলা মৌজায় প্রায় ১০০ শতক সরকারি খাস জমি রয়েছে। এলাকাবাসী ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন, এই জমিতে বাজার ও বসতবাড়ি গড়ে তুলতে যেন ভূমিহীনদের সুযোগ দেওয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রাথমিকভাবে সরকারি ওই জমিতে বাজার স্থাপন ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর জন্য বসতঘর নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু প্রভাবশালী ভূমি দস্যু এই সরকারি জমি দখলের চেষ্টা করছে। ফলে অসহায় পদ্মার চরবাসী আবারও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। ভূমিহীন মানুষের দাবি, অবিলম্বে দখলদারদের হাত থেকে জমি রক্ষা করে তাদের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক।

এলাকাবাসীর একটাই আর্জি— “আমরা চাই মাথা গোঁজার ঠাঁই, নদী ভাঙনে হারানো জীবনের নতুন শুরু।”তাদের হরিলুটে মানিকগঞ্জ শেষ, নদী থেকে মাটি তোলার কারনেই ভেঙ্গে গেছে পাটুরিয়া লঞ্চ ঘাটের জেটি, ঝুঁকিতে ফেরি ঘাট

পাটুরিয়া ঘাটের কাছেই নদীতে কাটার মেশিন ও ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলার কারনেই দু'দফায় ভেঙ্গে পড়েছে লঞ্চে যাত্রী ওঠা-নামার জেটি ও পন্টুন। এ অবস্থা কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও ঘাট ও পন্টুন এখনো ঠিক করেনি কর্তৃপক্ষ। লঞ্চ মালিকরা তাদের ব্যবসার সার্থে ঝুঁকির মধ্যে চালু রেখেছে লঞ্চ সার্ভিস। পন্টুন না থাকায় মাটির ঘাটে কাঠের সিঁড়ি দিয়েই যাত্রী ওঠা-নামা চলছে।এতে যাত্রী হয়রানিসহ জীবন নাশের শঙ্কা করছেন অনেকে। কাঠের সিঁড়ি ও মাটির ঘাটে পা পিচলে কোন যাত্রী পদ্মায় পড়ে গেলেই ভেসে যাবে প্রবল স্রোতে। ঘাট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। 

তারা আরো জানিয়েছেন, যেখানে অস্থায়ী ঘাট করা হয়েছে সেখানে প্রচন্ড স্রোত ও পানির গভীরতা অনেক বেশী। নদীতে কাটার মেশিন ও ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলার কারণেই সেখানে  গভীরতা বেশী হয়েছে। পানির তীব্র স্রোত ও ঘুর্নিপাকে নদীর পাড় ধ্বসে যাচ্ছে। যার ফলে পাটুরিয়া ঘাট চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে। দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন না করা হলে ঘাটটি বিলীনের শঙ্কা করেছেন অনেকে। বিগত কয়েকদিন যাবত পাটুরিয়া ঘাট পরিদর্শন ও ঘাট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশ পথ পাটুরিয়া দৌলতদিয়া নৌরুট। এ নৌরুটের পাটুরিয়া প্রান্তে পদ্মায় তীব্র স্রোতে সৃষ্ট ঘুর্ণিপাতে গত ৫ আগস্ট লঞ্চ ঘাটের জেটিসহ ঘাট নদীগর্ভে বিলীণ হলে তা স্থানান্তর হয় উত্তর দিকের ২নং ফেরি ঘাটে। একইভাবে সে ঘাটটিও গত ৮ আগস্ট সন্ধায় বিলীন হয়ে যায়। এতে ১৩ ঘন্টা বন্ধ থাকে এরুটের লঞ্চ সার্ভিস। 

পাটুরিয়া ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, এমন নাজুক পরিস্থিতিতেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে সরকারী টারমিনালের জমিতে চলছে অবৈধ বালু মাটির ব্যবসা। নদীর পাড় ঘেসে মাটি কাটার ফলে ঘাটটি পড়েছে চরম ঝুঁকিতে। যে কোন সময় সম্পূর্ন ঘাটটি ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে ঢাকার সাথে দক্ষিণাঞ্চলের। 

অপরদিকে, বালুর কারণে স্থানীয়  জনসাধারনের মধ্যে ছড়াচ্ছে এলার্জিসহ নানাবিধ রোগ ব্যাধি। ঘাট এলাকার বাতাসে বালু উড়ার কারণে হোটেল রেস্তোরাসহ এলাকাবাসী তাদের খাবারে সাথে নিয়মিত বালু খাচ্ছে। এতে তাদের খাবারও নষ্ট হচ্ছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে ঘাটের বিকল্প রাস্তাটি। এসব রোধে প্রশাসনের তরফ হতে মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হলেও তা নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক।

ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, পাটুরিয়া ঘাটের উত্তরাংশে বিআইডব্লিউটিএ’র ফর্সকৃত জমি ও নদী তীরবর্তি এলাকা থেকে বালু-মাটি কাটার চলছে মহোৎসব। রাতের আধারে পদ্মা নদীতে কাটার মেশিন, ড্রেজার ও বাল্কহেডযোগে কাটা হচ্ছে মাটি। ফোরসোর জায়গা দখল করে নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা এ বালু মাটির ব্যবসা করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। এরা সিন্ডিকেট করে এই বালু মাটি কেটে দেদারছে বাণিজ্য করলেও সরকার কোন রাজস্ব পাচ্ছে না। এভাবে অবৈধভাবে বালু-মাটি কাটা অব্যহত থাকলে চলতি বর্ষা মৌসুমে পাটুরিয়া ফেরি ঘাট ও নৌ-বন্দরসহ আশপাশের এলাকা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়বে। ইতিমধ্যেই লঞ্চ ঘাটের জেটিটি ভেঙ্গে গেছে। একই কারণে পাটুরিয়া ফেরি ঘাট ও নদী বন্দর হুমকির মুখে পরেছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।




 

সম্পাদকীয় :

প্রকাশক ও সম্পাদক : মোঃ গোলাম মাওলা শাওন
মোবাইল : ০১৭১১-০০৬২১৪

অফিস :

প্রধান কার্যালয় : ৩১/১ শরীফ কমপ্লেক্স ৫ম তলা পুরানা পল্টন ঢাকা ১০০০

মোবাইল : ০১৯৯৯-৯৫৩৯৭০

ই-মেইল : [email protected],  [email protected]