হেলাল উদ্দীন (মিঞাজী) নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ
হাসিনার বিচার না হলে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে না নির্বাচনের আগে হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।
সোমবার (১৮ আগস্ট) রাত ৯টায় নগরীর ২ নম্বর গেটের চট্টগ্রাম কনভেনশন হলে চট্টগ্রামস্থ বান্দরবানবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় স্কুল-কলেজ কার্যক্রম সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে এবং সাবেক বান্দরবান জেলা সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বান্দরবান জেলা জামায়াতের আমির এস এম আব্দুস সালাম আযাদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এডভোকেট আবুল কালাম এখন বান্দরবানের সর্বস্তরের মানুষের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পরিণত হয়েছেন। আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তির এক বছর পূর্তি হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়নি। ড. ইউনুস শুরু থেকে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে তিনি নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক না কেন, জামায়াতে ইসলামী সবসময় প্রস্তুত। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। ফেব্রæয়ারিতে যে নির্বাচনী রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে, তার আগে জুলাই সনদকে আইনি কাঠামোয় আনতে হবে। দেশের নাগরিকদের চাহিদা পূরণ করতে হলে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। আগে হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। হাসিনার বিচার ছাড়া নির্বাচন উৎসবমুখর হবে না।
তিনি আরও বলেন, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চায়। বান্দরবান-৩০০ আসন থেকে আমরা ঘোষণা দিচ্ছি দেশে অবশ্যই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে। এতে সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।
শাহজাহান বলেন, আবুল কালাম একজন যোগ্য ও সৎ ব্যক্তি। আওয়ামী আমলেও তিনি বারবার জেলা বারে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই বিপ্লবে ১০৭ জন শিশু জীবন দিয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অভ‚তপূর্ব। প্রায় ২ হাজার শহীদ ও অসংখ্য আহত গাজীর ত্যাগের কারণে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি।
তিনি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, টার্গেটভিত্তিক কাজ করতে হবে। নিজ নিজ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ও তথ্য মুখস্থ রাখতে হবে। মহিলা সমাবেশ, যুব সমাবেশ, উঠান বৈঠক শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। শহর থেকে গ্রামে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। ভোটারদের নার্সিং করতে হবে। অমুসলিম ভাইবোনদের মাঝেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। আবুল কালামের সততা ও অবদান ঘরে ঘরে তুলে ধরতে হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে দাঁড়িপাল্লার দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের প্রতীক ও নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছিল। আল্লাহর কৃপায় আমরা সেই নিবন্ধন ফিরে পেয়েছি। আমাদের নিষিদ্ধ করেছিল, কিন্তু তারাই আজ নিষিদ্ধ।
এ সময় জেলা আমির এস এম আব্দুস সালাম আযাদ বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশাওয়ালাদের কাছেও দাঁড়িপাল্লার বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। বান্দরবান আসন সম্ভাবনাময়। সবাই পরিশ্রম করলে দাঁড়িপাল্লাকে বিজয়ী করা সম্ভব।
সংসদ সদস্য প্রার্থী এডভোকেট আবুল কালাম বলেন, বান্দরবানে জামায়াত অতীতেও নির্বাচন করেছে। প্রতিটি গ্রাম ও গঞ্জে দাঁড়িপাল্লার দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। বান্দরবানকে সন্ত্রাসমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত ও শান্তিপ্রিয় জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জেলা পরিষদের দায়িত্ব পালনকালে আমি কখনো বৈষম্য করিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইউনুস বলেন, আমরা বান্দরবানে র্যাডিক্যাল পরিবর্তন চাই। আবুল কালাম নির্বাচিত হলে সৎ নেতৃত্বের মাধ্যমে বান্দরবানকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতি ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মাওলানা রফিক বশরী বলেন, ৫ আগস্টের পর একটি দল পাওয়ার পলিটিক্স শুরু করেছে। নব্য ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। উপজাতিরা কখনো বেঈমানি করে না, তাদের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াতে হবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ওমর ফারুক সিরাজী বলেন, আবুল কালামের মতো সৎ লোক এমপি নির্বাচিত হলে বান্দরবানে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাবে। জামায়াত বিভিন্ন উপজেলায় গাছের চারা, গরু, সেলাই মেশিনসহ নানা সহায়তা দিয়েছে। সমৃদ্ধ বান্দরবান গড়তে দাঁড়িপাল্লার বিকল্প নেই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ইসলামী মূল্যবোধ ধারণ করলে চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। বান্দরবানে আবুল কালাম নির্বাচিত হলে অমুসলিমরাও নিরাপদ থাকবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, এডভোকেট আবু নাসের, বাইশারী ইউনিয়ন সভাপতি মো. সেলিম, মাওলানা আইয়ুব আলী আনসারী, মহসিন কলেজ সভাপতি খুররম আহমেদ, ছাত্রশিবির বান্দরবান জেলা সেক্রেটারি মোস্তাক আহমেদ, ছাত্রশিবির মহানগর দক্ষিণের সাবেক সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী এডভোকেট ইব্রাহিম মোজাহিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন, চাক সম্প্রদায়ের নেতা জীবন চাক, তাওহীদুল ইসলাম তকি, ইউনুস মিয়া, বান্দরবান ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি আসিফ ইকবাল, ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ, নুরুল আজিজ প্রমুখ।