বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বিএমজেপি'র প্রতিক্রিয়া ও জরুরী “সংবাদ সম্মেলন”
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বিএমজেপি'র প্রতিক্রিয়া ও জরুরী “সংবাদ সম্মেলন”
নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জাতীয় প্রেসক্লাব, “আব্দুস সালাম হল” অডিটোরিয়াম, তোফখানা রোড, ঢাকায় ৯/৮/২০২৫ রোজ শনিবার সকাল ১১:৩০ ঘটিকায় এক বিশেষ জরুরী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বিএমজেপি।
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বিএমজেপি'র সহ-সভাপতি আর কে মন্ডল (রবিন)'র সঞ্চালনায় বিশেষ জরুরি এই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, বিএমজেপি'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএমজেপি'র সহ সভাপতি আর কে মন্ডল (রবিন), অধ্যক্ষ (অবঃ) নিরদ বরণ মজুমদার সহ সভাপতি বিএমজেপি, রবীন্দ্রনাথ বর্মন সহ সভাপতি বিএমজেপি, চানমোহন রবিদাস সহ সভাপতি বিএমজেপি, বিএমজেপি'র মহাসচিব দিলীপ কুমার দাস, স্বপন কুমার ব্যাপারী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএমজেপি, অনিল পাল কেন্দ্রীয় সদস্য বিএমজেপি, দিলীপ কুমার দাস কেন্দ্রীয় সদস্য বিএমজেপি, উপস্থিত ছিলেন বিএমজেপি'র তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও গুণীজন প্রমূখ্য।
বক্তারা বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বর্বরোচিত হামলা এবং সংবিধান ও জুলাই ঘোষণাপত্রে তাদের স্বার্থ উপেক্ষিত হওয়া এবং ঐকমত্য কমিশনসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একমাত্র নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল 'বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি'কে আমন্ত্রণ না জানানো এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কোন প্রকার মতামত গ্রহণ না করার বিষয়ে বিএমজেপি’র তীব্র প্রতিবাদ ও সরকারের প্রতি জরুরি দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বিএমজেপি'র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুকৃতি কুমার মন্ডল বলেন- উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ এবং দেশের সকল সচেতন নাগরিক,
আজ আমরা আপনাদের সামনে এসেছি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত এবং ক্ষুব্ধ হৃদয় নিয়ে।
আপনারা জানেন যে, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ধর্মের অবমাননার মিথ্যা ট্যাগ লাগিয়ে বর্বরোচিত হামলা, লুটপাট, বাড়িঘর ভাঙচুর, মন্দির ভাঙচুর, ধর্ষণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য অমানবিক ও ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে।
আমরা এই ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখি না। যখনই দেশে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন বা অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তখনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে। এই ঘটনাগুলো আমাদের সেই বিভীষিকাময় ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইতিহাস আবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নতুন করে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে।
আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের সংবিধান, যা দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে, তা ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রয়েছে এবং সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ প্রায় অনুপস্থিত। এই সংবিধান আমাদের নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সমঅধিকার নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমরা বছরের পর বছর ধরে সংবিধানের এই বৈষম্যমূলক দিকগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এসেছি, কিন্তু কোনো সরকারই এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি।
আরো দুঃখজনক যে, দেশের জনগণের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস ঘোষিত 'জুলাই ঘোষণাপত্রে'ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা বা সুখবর নেই। যখন নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি হচ্ছে, তখন দেশের প্রায় তিন/পাঁচ কোটি মানুষের অস্তিত্বের প্রশ্নটি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং ২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনার পরিপন্থী।
এই প্রেক্ষাপটে, আমরা বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-বিএমজেপি’র পক্ষ থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নিম্নোক্ত জরুরি দাবিগুলো জানাচ্ছি:
১. হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল সহিংসতার ঘটনার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে যেন কোনো অপরাধী পার না পায়, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে।
২. ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ: ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা, বাড়িঘর ও উপাসনালয় পুনর্নির্মাণে পর্যাপ্ত সহায়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা অপরিহার্য।
৩. সংবিধানের সংস্কার: একটি সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হোক। এই কমিশনকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ সুরক্ষা, অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে সংবিধানের ধারাগুলো সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হোক।
৪. জুলাই ঘোষণাপত্রে সংশোধন: জুলাই ঘোষণাপত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, সম্পত্তি রক্ষা এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। এই সনদের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করার আগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার ব্যবস্থা করা হোক।
৫. বিশেষ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর সহিংসতা, জমি দখল এবং হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক, যা সকল অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
৬. রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ: জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক।
আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা শুধু দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার নয়, বরং সকল নাগরিকের জন্য একটি নিরাপদ ও সমতাপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার দিকে মনোযোগ দিন এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি সিদ্ধান্তে ধর্মীয় সখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করুন।
একটি জাতিকে উপেক্ষা করে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন সফল হতে পারে না।
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বিএমজেপি'র সহ-সভাপতি আর কে মন্ডল (রবিন) বলেন আসুন আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সম্প্রীতির বন্দনে একটি সুন্দর সুশৃংখল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ি।
আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদেরকেই সম্মিলিতভাবে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হতে হবে।
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি বিএমজেপি এই লড়াইয়ে আপনাদের পাশে আছে এবং থাকবে।
আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই যেখানে সকল নাগরিক সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে নির্ভয়ে বাস করতে পারবে।
সভাপতির পরিসমাপ্তি বক্তব্য দ্বারা বিশেষ জরুরি সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স